
ছবি: সংগৃহীত
কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। হামলার পর পাল্টাপাল্টি হুমকি ও সামরিক প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে। তবে সংকটের এই সময়ে পরাশক্তিগুলোর সমর্থন আদায়ে দৌড়ঝাঁপ করেও একরকম একাকীত্বে পড়ে গেছে ভারত।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, ভারত যদি উত্তেজনা সৃষ্টি করে, তবে পাকিস্তানকে কেউ থামাতে পারবে না। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছেন এবং কূটনীতিকদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করছেন। কিন্তু কূটনৈতিক তৎপরতা সত্ত্বেও দৃশ্যত ভারত প্রত্যাশিত সমর্থন পাচ্ছে না।
মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ভারত এখন আর কেবল সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা করছে না, বরং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু মোদী সরকারের এই কৌশলে সমর্থনের ঘাটতি স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তার দেশ কাশ্মীর ইস্যুতে নিরপেক্ষ অবস্থান নেবে। এর ফলে ভারতের কৌশলগত চাহিদায় বড় ধাক্কা লেগেছে।
রাশিয়ার দিক থেকেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। ক্রেমলিন পাকিস্তানে অবস্থানরত রুশ নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে—যা সাধারণত রাশিয়া করে না। বিশ্লেষকদের মতে, এই সতর্কবার্তা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জারি করা হয়েছে, যা পাকিস্তানে ভারতের সম্ভাব্য হামলার আভাস দিচ্ছে। কিন্তু রাশিয়া সরাসরি ভারতের পাশে দাঁড়ানোর ঝুঁকি নিতে চায় না, বিশেষত চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে।
চীন ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে। পেহেলগামের ঘটনার পর বেইজিং থেকে পাকিস্তানকে সমর্থনের বার্তা দেওয়া হয়েছে। শুধু কথায় নয়, বরং কার্যকর সামরিক সহায়তাও মিলেছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন পাকিস্তানকে অত্যাধুনিক পিএল-১৫ দূরপাল্লার আকাশ থেকে আকাশে হামলার মিসাইল সরবরাহ করেছে, যা ভারতের রাফায়েল যুদ্ধবিমানকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
তুরস্কও পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ঘোষণা করেছেন, পাকিস্তানের জনগণের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। এমনকি অস্ত্রবাহী সাতটি সামরিক বিমান ইতোমধ্যে তুরস্ক থেকে পাকিস্তানে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
ভারতের জন্য আরেকটি বিব্রতকর দিক হলো তালেবান সরকারের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক যোগাযোগ। এতদিন আফগানিস্তানকে জঙ্গি রাষ্ট্র আখ্যা দিলেও এখন মোদী সরকার তালেবানের সাথেও বৈঠকে বসেছে, শুধুমাত্র সমর্থন পাওয়ার আশায়।
দেশের অভ্যন্তরেও নানা প্রতিকূলতা বেড়েই চলেছে। পাঞ্জাবের খালিস্তান আন্দোলনের নেতা গুরুপথ বন্ত সিং পান্নু ঘোষণা দিয়েছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের ক্ষেত্রে শিখরা তাদের ভূমি ব্যবহার করতে দেবে না। এমনকি প্রয়োজনে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়ানোর কথাও বলেছেন তিনি।
এই সংকটকালে কোনও বড় শক্তির সরাসরি সমর্থন না পেয়ে ভারত ফ্রান্সের সাথে ২৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত যেহেতু একইসাথে আমেরিকা ও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তাই যুদ্ধের সময় তারা কাউকেই সম্পূর্ণভাবে পাশে পাবে না। চীন ও তুরস্কের মতো শক্তিধর মিত্র না থাকায় এবং অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের হুমকি মাথায় নিয়ে কার্যত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একা হয়ে পড়েছে ভারত।
পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=cYZAuDkmf4E