ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

কাশ্মীরে থাকতে দিন, না হলে মৃতদেহ পাঠিয়ে দিন:পাকিস্তানি স্ত্রীদের আকুতি

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ২৯ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৭:৫৫, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

কাশ্মীরে থাকতে দিন, না হলে মৃতদেহ পাঠিয়ে দিন:পাকিস্তানি স্ত্রীদের আকুতি

কাশ্মীরে আসা সাবেক জঙ্গিদের পাকিস্তানি স্ত্রীদের চোখে এখন শুধু অনিশ্চয়তা আর ভয়ের ছাপ। বহিষ্কারের মুখে দাঁড়িয়ে তাঁরা বুক ভরা কষ্ট নিয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন,কাশ্মীরে থাকতে দিন, না হলে মরতেই রাজি আছেন তাঁরা। অনেকে সন্তানসমেত এখানে ঘর বেঁধেছেন, জীবন গুছিয়ে নিয়েছেন। এখন তাঁদের কাছে পাকিস্তানে ফেরা যেন মৃত্যুর সমান।

২০১০ সালে সাবেক জঙ্গিদের জন্য ঘোষিত পুনর্বাসন নীতির আওতায় পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরে এসেছিলেন এসব নারী। তাঁদের অনুরোধ, "আমাদের এখানে থাকতে দিন, কিংবা মৃতদেহ পাঠিয়ে দিন।"

আলিযা রফিক, এক সাবেক জঙ্গির স্ত্রী, ২০১৩ সালে ওমর আবদুল্লার সময়কার পুনর্বাসন নীতির সুযোগ নিয়ে কাশ্মীরে পাড়ি দেন। সেই নীতিতে বলা হয়েছিল, যারা সহিংসতা ত্যাগ করে উপত্যকায় ফিরতে চান, তাঁদের ফিরিয়ে এনে সমাজের মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

উত্তর কাশ্মীরের এক ছোট্ট শহরে বসবাস করেন আলিযা। কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি জানান, পুলিশ তাঁকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলেছে।"আমাদের চলে যেতে বলেছে। আমার তিনটি সন্তান। বলেছে, আমার ছোট্ট মেয়েকে এখানে রেখে যেতে।সে তো এখনও অনেক ছোট,আমি তাকে ফেলে কীভাবে যাব?", বলেন আলিযা।

"আমি কিভাবে আমার স্বামীকে ছেড়ে যাব? এখানে আমরা নিজেদের ঘর বানিয়েছি, স্বপ্ন বুনেছি। সরকারের ঘোষিত নীতির উপর আস্থা রেখেই তো এসেছিলাম। আমরা কী অপরাধ করেছি? আমাদের ভোটার কার্ড আছে, আধার কার্ড আছে। আমি নিজে এখানে ভোট দিয়েছি," বলেন তিনি, চোখের জল মুছতে মুছতে।

গত ১২ বছর ধরে কাশ্মারেই বাড়ি গড়ে তুলেছেন আলিযা। এখন প্রাণপণে তিনি আবেদন জানাচ্ছেন জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহার কাছে,এ জীবন যেন ছিনিয়ে নেওয়া না হয়।

"গভর্নর সাহেবের কাছে আকুতি আমাদের প্রতি দয়া করুন। আমরা কোনো অন্যায় করিনি। দয়া করে আমাদের এখানে থাকতে দিন। যদি থাকতে না দেন, তবে আমাদের মেরে ফেলুন, আর মৃতদেহ পাঠিয়ে দিন সীমান্তের ওপারে," বলেন তিনি এক নিঃশেষ কণ্ঠে।

আলিযার মতোই ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছেন আরেক পাকিস্তানি নারী, জাহিদা বেগম। তাঁরও কণ্ঠে অনুরোধ কাশ্মীরে শান্তিতে থাকতে দিন।

"পুলিশ আমাকে বলেছে দেশ ছাড়তে। আমি কোথায় যাব? আমার দুই মেয়ে মারিয়ম আর আমনা। আমার ছেলেটা ফাইজান, মাত্র ১০ বছর বয়স। বলেছে, ছেলেকে এখানেই রেখে যেতে। এটা কি সম্ভব? আমি আর ফিরতে চাই না পাকিস্তানে। আমাদের মাফ করে দিন," বলছিলেন জাহিদা, বুকচেরা আর্তি নিয়ে।

ভয়, অনিশ্চয়তা আর চোখের জলে কাশ্মীরে তাঁরা এখনো বাঁচার অধিকার খুঁজছেন।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/59h69t8s

আফরোজা

×