ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের একশ’ দিন

বিশ্বব্যবস্থায় ওলটপালট

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্বব্যবস্থায় ওলটপালট

দ্বিতীয় দফা হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তনের প্রথম ১০০ দিন অতিক্রম করার আগেই নজিরবিহীন কর্মকাণ্ডের এক ইতিহাস তৈরি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি হুট করে মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ করেছেন। কয়েকদফায় চড়া শুল্ক আরোপ আর স্থগিত করে সব দেশকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছেন। আবার আগের প্রশাসনের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ইউক্রেন যুদ্ধে প্রকাশ্যেই রুশ বয়ানের প্রতি নমনীয়তা দেখিয়েছেন। খবর সিএনএন অনলাইনের।
এছাড়া, ক্ষমতায় বসার আগে থেকেই গ্রিনল্যান্ড ও পানামা দখল এবং কানাডাকে ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার খায়েশ বেশ জোরালোভাবে প্রকাশ করে আসছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে পুরো বিশ্বব্যবস্থাকে ওলটপালট করে দিচ্ছেন ট্রাম্প। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যে বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তার ভিত্তি ১০০ দিনের কম সময়ে নড়বড়ে করে তুলেছেন ৪৭তম এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডে হতবাক হয়ে আছেন এলিয়ট আব্রামস। রোনাল্ড রিগ্যান এবং জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনে কাজ করা আব্রামস ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের ইরান ও ভেনিজুয়েলার বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি বলেন, আট বছর আগের সঙ্গে এই ট্রাম্পের লক্ষণীয় পার্থক্য রয়েছে। এখন তিনি অনেক বেশি উগ্র।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ভিত্তিপ্রস্তর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি বা আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি। এই নীতি বাস্তবায়নের প্রয়াসে তার কাজকর্মে দীর্ঘদিনের মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে আর প্রতিদ্বন্দ্বীরা এখন আগের চেয়ে বেশি সরব হচ্ছে। তার প্রতিটি পদক্ষেপ এত বেশি অনিশ্চয়তা তৈরি করছে যে, সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, সবকিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা প্রায় দুঃসাধ্য হবে। এই সংকট কেবল বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে নয়, অভ্যন্তরীণ কাঠামোতেও ভাঙনের আভাস দেখছেন সমালোচকরা। তাদের মতে, মার্কিন গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছেন ট্রাম্প। বিচারকদের সঙ্গে আক্রমণাত্মক বাক্যবিনিময়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ এবং বিতাড়িত অভিবাসীদের এল সালভাদরের কারাগারে পাঠানোর মতো পদক্ষেপের কারণে মার্কিন আইনের প্রতি প্রশাসনের শ্রদ্ধা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বর্তমান প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে বিশ্বব্যবস্থায় মারাত্মক বিঘ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন ডেনিস রস। তিনি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় প্রশাসনে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সমঝোতাকারীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, কী হচ্ছে বা কী হতে যাচ্ছে, সেটা এখন আর কারও পক্ষেই অনুমান করা সম্ভব নয়।
একাধিক সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা, বিদেশী কূটনীতিক এবং বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ট্রাম্পের নীতির কারণে কিছু ক্ষতি হয়ত দীর্ঘস্থায়ী হবে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে ট্রাম্প ইতোমধ্যেই নমনীয়তা দেখিয়েছেন। যেমন শুল্ক আরোপের সময় ও মাত্রা নিয়ে পিছু হটা, তবে বিশ্লেষকরা বড় কোনো নীতিগত পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না। বিপরীতে, বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বিকল্প কৌশল তৈরি করতে শুরু করেছে। এর প্রভাব ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। মার্কিন অস্ত্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে ইউরোপীয় মিত্ররা নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির চিন্তা করছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি শুরু করা নিয়ে আলোচনা জোরালো হয়েছে।

প্যানেল

×