
ছবি: সংগৃহীত।
কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা ফের জোরালো হয়েছে। রবিবার (২৭ এপ্রিল) নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত উত্তেজনা প্রশমনের পরিবর্তে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাধিক দেশের নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেছেন এবং নয়াদিল্লির ১০০টিরও বেশি কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
তবে এই প্রচেষ্টা উত্তেজনা হ্রাসের জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কূটনীতিক।
মোদি তার এক ভাষণে সন্ত্রাসী আস্তানাগুলো ধ্বংস করার এবং কড়া শাস্তি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও সরাসরি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি।
এদিকে, কাশ্মিরে নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে এবং হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে।
ভারত ইতোমধ্যে পাকিস্তানমুখী নদীগুলোর পানিপ্রবাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে এবং পাকিস্তানি দূতাবাসের কিছু কর্মী ও ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে ভারতে মুসলিমবিরোধী মনোভাবও বাড়ছে। কাশ্মিরের বাইরে অধ্যয়নরত কাশ্মিরি শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হয়ে নিরাপত্তার অভাবে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
তবে হামলার পাঁচ দিন পরও ভারত সরকার কোনও সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম প্রকাশ করেনি এবং পাকিস্তানের জড়িত থাকার ব্যাপারে খুব কম প্রমাণ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান সরকার হামলার ঘটনায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা পাকিস্তানের অতীতের সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার ইতিহাস তুলে ধরেছেন এবং বর্তমান হামলার তদন্ত চলমান বলেও উল্লেখ করেছেন। তারা দাবি করেছেন, হামলাকারীদের পাকিস্তানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কিছু প্রযুক্তিগত প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরান ও সৌদি আরব দুপক্ষকেই সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম তিন মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত ভারতে কোনও মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ হয়নি। এটি দক্ষিণ এশিয়া ইস্যুকে ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকারের বাইরে রাখার ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক চাপের প্রভাব এখন আগের তুলনায় অনেক কম, ফলে ভারত চাইলে একতরফা সামরিক পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবে না।
সম্ভাব্য বড় ধরনের পদক্ষেপ
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ২০১৬ ও ২০১৯ সালের মতো এবারও ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাতে পারে। তবে পাকিস্তানও পাল্টা কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানোর হুমকি দিয়েছে, এবং ভারতের আক্রমণের চেয়েও বড় জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বিশ্লেষক ড্যানিয়েল মার্কি সতর্ক করেছেন, উভয় দেশই নিজেদের সামরিক সক্ষমতা অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করছে, যা পরিস্থিতিকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দিতে পারে।
এক কূটনীতিক মন্তব্য করেছেন, “কেবল অতীতের রেকর্ডের ভিত্তিতে কি পরমাণু অস্ত্রধারী প্রতিবেশীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করা উচিত?”
সায়মা ইসলাম