ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

ইসরাইলের সামরিক স্থাপনায় সফল হামলা হুতি বিদ্রোহীদের

প্রকাশিত: ১৩:১৬, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

ইসরাইলের সামরিক স্থাপনায় সফল হামলা হুতি বিদ্রোহীদের

ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে হুতি বিদ্রোহীদের নতুন সফল হামলার সাড়া বিশ্বে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। রবিবার, তাদের সশস্ত্র আক্রমণে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, যখন ইয়েমেনের হুতি আন্দোলন ইসরাইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় এক ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। এটি ছিল তাদের প্রতিশোধমূলক অভিযানের অংশ, যা ইসরাইলের জন্য আরও বড় সংকেত হয়ে উঠেছে। একের পর এক সুনিপুণ আক্রমণে হুতি বিদ্রোহীরা শুধু শক্তির প্রকাশই করছে না, বরং তাদের ক্ষমতা ও আগ্রাসনের নতুন দিকও তুলে ধরছে।

হুতি নেতৃত্বাধীন ইয়েমেন সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে তারা অধিকৃত ফিলিস্তিনের দক্ষিণে আল নাকাব অঞ্চলে অবস্থিত ইসরাইলি নেভাতিম বিমান ঘাটিকে লক্ষ্য করে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে। সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানান, এই অভিযানে হুতিরা প্রথমবারের মতো একটি হাইপারসোনিক ব্যালস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে এবং তার নির্ভুলভাবে নির্ধারিত লক্ষে আঘাত হেনেছে। এই সাফল্য ইয়েমেনী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি ও উৎকর্ষের দৃশ্যমান প্রমাণ হয়ে উঠেছে।

বিবৃতিতে আরো জোর দিয়ে বলা হয়, "আমরা মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব এবং আমাদের সামরিক সক্ষমতা উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।" এই ঘোষণা স্পষ্ট করে দেয় যে প্রতিরক্ষামূলক ও সহায়ক সব অভিযান চলতে থাকবে যতক্ষণ না গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ হয় এবং অবরোধ পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়।

নেভাতিম বিমান ঘাটির উপর এই হামলা ছিল একই লক্ষ্যবস্তুতে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মত পরিচালিত আঘাত। এর আগে শনিবার হুতি বিদ্রোহীরা একই ঘাটিতে "ফিলিস্তিন টু" নামে একটি হাইপারসোনিক ব্যালস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্রটি আটকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়, যা তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভয়াবহ দুর্বলতাকে প্রকাশ করে।

রবিবার ভোরে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র স্বীকার করেন যে ইয়েমেন থেকে একটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপিত হয়েছে। হামলার পরপরই মৃতসাগর এলাকা এবং ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সাইরেন বাজানো হয়, যা পুরো এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করার ইঙ্গিত দেয়। ইসরাইলের সংবাদ মাধ্যমগুলো দ্রুত এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির খবর প্রকাশ করে এবং জনসাধারণের মধ্যে বাড়তে থাকা আতঙ্ক ও উদ্বেগের কথা তুলে ধরে।

বিশেষ করে হুতিদের হামলার পরিমাণ ও তীব্রতার ক্রমবর্ধমান ধারা ইসরাইলি জনগণের ভেতরে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে ইয়েমেনে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের লাগাতার বিমান হামলা, যেখানে নারী ও শিশুসহ প্রচুর বেসামরিক মানুষ হতাহত হচ্ছেন, তাও হুতিদের দৃঢ় অবস্থান নাড়াতে পারেনি। বরং এই আগ্রাসনের মাঝে ক্ষতি বিদ্রোহীরা দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমির গভীরে এবং লাল ও আরব সাগরের জলসীমায় আরো বিস্তৃত সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

হুতি নেতৃত্ব বারবার ঘোষণা করেছে গাজায় ইসরাইল গণহত্যামূলক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে। তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছে, "যতক্ষণ না দখলদার বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনের রক্তপাত বন্ধ হয় এবং অবরোধ তুলে নেয়া হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।" তাদের এই সংগ্রাম শুধুমাত্র ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধেই নয়, বরং মার্কিন মদদদাতাদের বিরুদ্ধেও, যারা এই দখলদারী ও গণহত্যাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

এই হামলা ও উত্তেজনার ধারাবাহিকতায়, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা একে একে বিশ্বে নিজেদের সামরিক ক্ষমতার প্রদর্শন করছে। অন্যদিকে, ইসরাইলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তার সামরিক প্রতিরক্ষা শক্তি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, যা আগামী দিনগুলোতে আরও বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।

 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/2r44zb9p

আফরোজা

×