ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

ইরানের বন্দর নগরীতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত বেড়ে ২৮, আহত ৮০০

প্রকাশিত: ২২:১৬, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

ইরানের বন্দর নগরীতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত বেড়ে ২৮, আহত ৮০০

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের বন্দর নগরী বান্দার আব্বাসে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণে অন্তত ২৮ জন নিহত ও ৮০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

বিস্ফোরণের পর শাহিদ রাজায়ী বন্দরের একটি অংশ থেকে ঘন ধূসর ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়, যার ভিডিও সিএনএন কর্তৃক ভূ-স্থানীয়করণ করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, রসায়নিক পদার্থের মজুতির কারণেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইস্কান্দার মোমেনি জানিয়েছেন, এখনো ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন। তীব্র বাতাসের বাধা সত্ত্বেও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এখনো বিস্ফোরণের সুনির্দিষ্ট কারণ প্রকাশ করা হয়নি। সরকারি মুখপাত্র ফাতে মোহাজেরানি বলেন, বিস্ফোরণের কারণ নির্ধারণে কিছুটা সময় লাগবে। তবে আপাতত জানা গেছে, বন্দরের এক কোণে রাখা কিছু কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই বিস্ফোরণটি ঘটেছে। তিনি আরও যোগ করেন, আগুন সম্পূর্ণ নেভার আগে সঠিক কারণ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

জাতীয় ইরানি তেল শোধন ও বিতরণ কোম্পানি জানিয়েছে, বন্দরের এই বিস্ফোরণের সঙ্গে তাদের তেল শোধনাগার, জ্বালানি ট্যাংক বা পাইপলাইনের কোনো সংযোগ নেই। এর আগে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল, অজ্ঞাত কারণে একটি জ্বালানিবাহী ট্যাংকারে বিস্ফোরণ ঘটে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় বান্দার আব্বাসে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শহরের বায়ুদূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় নাগরিকদের ঘরে অবস্থান করতে, বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলতে এবং জানালা বন্ধ রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জরুরি স্বাস্থ্য টিম মোতায়েন করেছে এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে।

মেহর নিউজ এজেন্সি প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, বন্দরের একটি গুদামে বিস্ফোরণের মুহূর্তের নজরদারি ফুটেজ। অন্য ফুটেজে দেখা গেছে, হেলিকপ্টার থেকে আগুন নেভাতে পানি ছিটানো হচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, বিস্ফোরণে বন্দরের বিস্তীর্ণ এলাকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে ধ্বংসাবশেষ, এবং অনেক ভবন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকার জানালাগুলো ভেঙে পড়েছে। কিছু রিপোর্টে বলা হয়েছে, ধ্বংসস্তূপে অনেকে আটকা পড়েছেন।

প্রদেশের গভর্নর মোহাম্মদ আশুরি তাজিয়ানি জানান, আহতদের বান্দার আব্বাসের বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। আপাতত বন্দরটি বন্ধ রাখা হয়েছে এবং সামুদ্রিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ দেওয়া বার্তায় তিনি লিখেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে ঘটনার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার জন্য। প্রেসিডেন্ট জানান, ঘটনার সম্ভাব্য কারণ বিশ্লেষণ করে দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পরিচালনা জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়।

রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরআইবি জানিয়েছে, বিস্ফোরণটি বন্দরের রাসায়নিক ও সালফার সংরক্ষণ এলাকায় ঘটেছে।

ঘটনাস্থলে ঘন কালো ধোঁয়ার মধ্যে দিয়ে উড়তে দেখা গেছে হেলিকপ্টার। এ ঘটনায় গোটা দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখা যায়, অনেক নাগরিক আহতদের জন্য রক্তদান করতে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

শাহিদ রাজায়ী বন্দর একটি বৃহৎ কনটেইনার শিপমেন্ট সুবিধা, যার আয়তন প্রায় ২,৪০০ হেক্টর (প্রায় ৫,৯০০ একর)। বছরে ৭ কোটি টন পণ্য ওঠানামা হয় এখানে, যার মধ্যে রয়েছে তেল ও অন্যান্য সাধারণ পণ্য। বন্দরে রয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৪০ হাজার বর্গফুটের গুদাম এবং ৩৫টি শিপিং বার্থ।

তথ্যসূত্রঃ সিএনএন

এসএফ

 

×