
ছবি: সংগৃহীত
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের হরমোজগান প্রদেশের শাহিদ রাজাই বন্দরে শনিবার ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ৮ জন নিহত এবং ৭৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ঘটনাস্থল থেকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসকান্দার মোমেনি বলেন, "এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৭৫০ জন আহত হয়েছেন। অন্যান্য শহর ও তেহরান থেকে সব ধরনের সহায়তা পাঠানো হয়েছে... আমরা আশা করছি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো।"
বিস্ফোরণের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও, বন্দরের কাস্টমস অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাসায়নিক ও বিপজ্জনক সামগ্রী সংরক্ষণাগারে আগুন লাগার ফলেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শাহিদ রাজাই, যা ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক বন্দর, সেখানে "ভয়াবহ বিস্ফোরণ" হয়েছে। বিস্ফোরণের পর টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, বন্দরের ওপর দিয়ে ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে উঠছে এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় জরুরি সেবা বিভাগের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, কমপক্ষে ৫১৬ জন আহত হয়েছেন এবং শত শত মানুষকে কাছাকাছি চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্ধার ও ত্রাণ সংস্থার প্রধান বাবাক মাহমুদি জানান, এখন পর্যন্ত অন্তত চারজনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণে তিনজন চীনা নাগরিক হালকা আহত হয়েছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ধ্বংসাবশেষে ভরা চওড়া সড়কে উদ্ধারকর্মী ও আহতরা হাঁটছেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া ট্রাকের ট্রেইলার এবং রক্তমাখা বিধ্বস্ত গাড়ির দৃশ্যও দেখা গেছে। বিস্ফোরণে বন্দরের অনেক কন্টেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শাহিদ রাজাই বন্দর, যা তেহরান থেকে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত, ইরানের সবচেয়ে আধুনিক কনটেইনার বন্দর। এটি হরমুজ প্রণালীর কাছে, যার মাধ্যমে বিশ্বের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ তেল পরিবাহিত হয়।
হরমোজগান প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান মেহরদাদ হাসানজাদেহ জানান, "শাহিদ রাজাই বন্দরের জেটি এলাকায় সংরক্ষিত কয়েকটি কনটেইনার বিস্ফোরণের কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।"
তিনি আরও জানান, "আহতদের দ্রুত নিকটবর্তী চিকিৎসা কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।"
ফার্স সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, বিস্ফোরণের অভিঘাত ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও অনুভূত হয়েছে এবং অনেকেই মাটি কাঁপতে অনুভব করেছেন। তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে বন্দরের অধিকাংশ ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, ইরানের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাতীয় তেল পণ্য পরিবেশন সংস্থা (এনআইওপিডিসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শাহিদ রাজাই বন্দরের বিস্ফোরণের সঙ্গে কোনো তেল শোধনাগার, জ্বালানি ট্যাংক, বিতরণ কমপ্লেক্স বা তেল পাইপলাইনের কোনো সংযোগ নেই। তারা জানিয়েছে, "বন্দর আব্বাসের তেল স্থাপনাগুলো স্বাভাবিকভাবে চালু রয়েছে।"
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ইরানে এটি অন্যতম ভয়াবহ কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে তাবাসের একটি কয়লা খনিতে গ্যাস লিকের কারণে বিস্ফোরণে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
শনিবারের এই বিস্ফোরণের সময় ওমানের মাস্কাটে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক চলছিল।
শহীদ