
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নির্দিষ্ট অরণ্যাঞ্চলে এমন এক বিরল ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, যা মশার কামড়ে মানুষের মস্তিষ্কে ভয়াবহ প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। ভাইরাসটির নাম লা ক্রস ভাইরাস। একবার শরীরে প্রবেশ করলে এটি সোজা পৌঁছে যেতে পারে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে, এমনকি আক্রান্ত করতে পারে নিউরনকে।
কোথা থেকে এল এই ভাইরাস?
এই ভাইরাসটির নাম এসেছে উইসকনসিনের লা ক্রস কাউন্টি থেকে, যেখানে ১৯৬০ সালের দিকে প্রথম এই রোগটি শনাক্ত করেন চিকিৎসকেরা। সাধারণত গ্রীষ্ম ও শরতের মাঝামাঝি সময়ে মশার সংখ্যা যখন বাড়ে, তখনই এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়।
প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০ থেকে ৯০টি লা ক্রস ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা রিপোর্ট হয়। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই পুরুষ, এবং ৯০ শতাংশ আক্রান্ত ব্যক্তি বয়সে কিশোর বা তরুণ। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কোনো দেশে এই রোগের উপস্থিতি ধরা পড়েনি।
কীভাবে ছড়ায় ভাইরাসটি?
লা ক্রস ভাইরাস মূলত ছড়ায় এডিস ট্রাইসেরিয়েটাস (Aedes triseriatus) নামের এক প্রজাতির মশার মাধ্যমে। এই মশা সাধারণত গাছের কোটরের ভেতরে বা খোলা পাত্রে জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। যারা অরণ্যঘেরা এলাকায় বসবাস করেন, কাজ করেন বা ঘুরতে যান, তাদের এই মশার সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
এই ভাইরাস শুধুই মশার মাধ্যমে ছড়ায়,একজন মানুষ থেকে আরেকজনের দেহে এটির সংক্রমণ হয় না। এমনকি আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি থেকেও মশা ভাইরাসটি নিজের দেহে নিতে পারে না, কারণ মানবদেহে ভাইরাসের ঘনত্ব পর্যাপ্ত মাত্রায় থাকে না। এজন্য বিজ্ঞানীরা একে বলেন “ডেড-এন্ড হোস্ট” বা শেষ গন্তব্য।
উপসর্গ কী হতে পারে?
অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হলো ৯৬ শতাংশ মানুষ যাঁদের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করে, তাঁদের মধ্যে কোনো উপসর্গই দেখা যায় না।
তবে যাঁদের উপসর্গ দেখা দেয়, তাঁদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ৩ থেকে ১০ দিনের মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে। বিশেষ করে ১৬ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। অনেক সময় ভাইরাসটি এনসেফালাইটিস বা মস্তিষ্কে প্রদাহের কারণ হয়।
এনসেফালাইটিসে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার ১ শতাংশেরও কম হলেও, ৫ থেকে ১৫ শতাংশ রোগী সংক্রমণ সেরে যাওয়ার পরও পুনরাবৃত্ত সিজার (খিঁচুনি) সমস্যায় ভোগেন।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
লা ক্রস ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই। তবে রোগী গুরুতর হলে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা বিভাগে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এই ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো মশার কামড় এড়ানো। এজন্য রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) বলছে:
বাইরে গেলে লম্বা হাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরুন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মশারোধী স্প্রে ব্যবহার করুন
বাড়ির চারপাশে যেকোনো স্থায়ী পানি জমে না থাকে, তা নিশ্চিত করুন
লা ক্রস ভাইরাস এখনো অনেকটাই অজানা, তবে এর ফলাফল হতে পারে প্রাণঘাতী। তাই, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের অরণ্যঘেরা অঞ্চলে ভ্রমণ বা বসবাস করছেন, তাঁদের জন্য সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াই হতে পারে সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।
সূত্র:https://tinyurl.com/2u945x3h
আফরোজা