ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

‘যদি আব্বাস না থাকেন’, এক অনিশ্চিত ফিলিস্তিনের গল্প!

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

‘যদি আব্বাস না থাকেন’, এক অনিশ্চিত ফিলিস্তিনের গল্প!

ছবিঃ সংগৃহীত

মাহমুদ আব্বাস এখন ৮৯ বছরের এক বৃদ্ধ। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি প্রায় দুই দশক ধরে আছেন, কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার অবনতি এবং বয়সের ভারে অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন — “আব্বাসের পর কে?”

এই প্রশ্নটা এখন শুধু একটা রাজনৈতিক কৌতূহল নয়, বরং একটি জাতির ভবিষ্যৎ টিকে থাকার প্রশ্ন। পশ্চিম তীরে প্রতিদিন বাড়তে থাকা সহিংসতা, গাজায় গণহত্যার মতো অভিযান এবং অভ্যন্তরীণ বিভক্তির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে একটি ক্লান্ত, অসুস্থ নেতৃত্ব।

উত্তরাধিকার ছাড়া একটি জাতি?

সম্প্রতি ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা (PLO) ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট’ নামের একটি নতুন পদ সৃষ্টি করেছে, যেন আব্বাস না থাকলে কারও হাতে অন্তত কিছু দায়িত্ব থাকে। কিন্তু এখনো ঠিক হয়নি কে হবেন এই ব্যক্তি। আর ততদিন পর্যন্ত মানুষের মধ্যে আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে — যদি হঠাৎ আব্বাস না থাকেন, কী হবে ফিলিস্তিনের?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে হুট করে শূন্যতা তৈরি হলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (PA) সম্পূর্ণ ভেঙে পড়তে পারে। সেই সুযোগে ইসরায়েল পশ্চিম তীর পুরোপুরি দখল করে নিতে পারে। গাজায় চলমান গণহত্যার মতো অভিযান আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে।

জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এক শাসক

২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে আব্বাস আর কোনো জাতীয় নির্বাচন দেননি। তার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু তিনি এখনও ক্ষমতায় আছেন। অনেকের চোখে তিনি এখন ‘নিজের জন্য শাসন ধরে রাখা এক নেতা’, যিনি নতুন কোনো নেতৃত্ব গড়ে উঠতে দেননি।

তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী হুসেইন আল শেখ, যিনি এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে তিনি একেবারেই অজনপ্রিয়। ফিলিস্তিনের জনগণ তাকে মনে করে ‘দখলদার ইসরায়েলের বন্ধু’, যিনি জনসাধারণের কণ্ঠস্বর নন।

একদিকে হামাস, আরেকদিকে ফাতাহ — বিভক্ত ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিনি জনগণ বহুদিন ধরে বিভক্ত হয়ে আছেন পশ্চিম তীর আর গাজা নিয়ে। গাজায় হামাসের শাসন, আর পশ্চিম তীরে ফাতাহর নিয়ন্ত্রণ — এই দুই ভাগ করা অবস্থার মধ্যে কোথাও নেই একক নেতৃত্ব, নেই ঐক্যের স্বপ্ন।

আর এ কারণেই অনেকেই বলছেন, শুধু ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ দিয়ে এই গভীর সমস্যার সমাধান হবে না। দরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নেতৃত্ব, যারা আসলেই জনগণের কথা বলবে, লড়বে।

আরব দেশগুলোর চাপ, মিশরের সক্রিয়তা

আরব দেশগুলো, বিশেষ করে মিশর, চাইছে আব্বাস যেন দ্রুত একজন উত্তরসূরি ঠিক করেন। তারা চায়, গাজার পুনর্গঠনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ যেন নেতৃত্ব নেয়। কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে — হামাস ও ইসরায়েল কেউই PA-কে গাজায় ফিরতে দিতে চায় না।

নির্বাচন ছাড়া কোনো পথ নেই

PLO-র সাবেক উপদেষ্টা ডায়ানা বুত্তু বলছেন, “একটা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ সৃষ্টি করে দেখানোর চেষ্টা চলছে যেন সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এটা তো একটা পুরনো ক্ষত; শুধু ব্যান্ডেজ দিলে হবে না, সার্জারি দরকার।”

২০০৬ সালের পর থেকে কোনো জাতীয় নির্বাচন হয়নি। এখন নতুন প্রজন্ম ভোট দিতে চায়, নিজেদের প্রতিনিধি নিজেই বেছে নিতে চায়। কিন্তু তার সুযোগই তারা পায়নি।

মাহমুদ আব্বাস যদি আজ না থাকেন, ফিলিস্তিন কোথায় দাঁড়াবে? এই প্রশ্ন এখন শুধু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নয়, প্রতিটি ফিলিস্তিনির বুকের ভেতরে ধুকপুক করে ওঠে। কারণ ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আর স্বপ্ন দেখে না — তারা শুধু একটা স্থিতিশীল আজ চায়। সেই আজ যেখানে তাদের কথা বলবে একজন নেতৃত্ব, যার জন্ম হবে ভোটে, বিশ্বাসে, আর জনতার মুঠোফোনে ছুটে আসা খবরের পাতায়, না যে কেবল এক গোপন বৈঠকের চেয়ারে।

তথ্যসূত্রঃ https://www.aljazeera.com/news/2025/4/25/why-the-palestinian-authoritys-abbas-is-under-pressure-to-pick-a-successor

মারিয়া

×