ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ স্থগিত, ভারত কি পাকিস্তানে প্রবাহিত নদীর পানি সত্যিই বন্ধ করতে পারবে?

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২৬ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৭:১৭, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ স্থগিত, ভারত কি পাকিস্তানে প্রবাহিত নদীর পানি সত্যিই বন্ধ করতে পারবে?

ছবি: সংগৃহীত

কাশ্মীরে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ১৯৬০ সালে সাক্ষরিত চুক্তি ‘ইন্দাস ওয়াটারস ট্রিটি’ (সিন্ধু পানি চুক্তি) স্থগিত করেছে ভারত।

আন্তর্জাতিক সীমান্তের পানি ব্যবস্থাপনার এক সফল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল ঐতিহাসিক এই চুক্তিটি। এবার গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ভারত এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে কার্যক্রম স্থগিত করায়, দুই দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন উত্তেজনা।

ছয়টি নদীর পানি দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগি করতে বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে সাক্ষরিত হয়েছিল এই চুক্তিটি। এর আওতায়, সিন্ধু নদী অববাহিকার ছয়টি নদীর মধ্যে তিনটি পূর্বাঞ্চলের নদী–রাভি, বিয়াস ও শতদ্রু ভারতের জন্য বরাদ্দ ছিল, আর পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি-সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব থেকে পাকিস্তান পেত ৮০% পানি।

ভারত বহুদিন ধরেই জলবায়ু পরিবর্তন, চাহিদা ও নতুন প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে চুক্তিটি পর্যালোচনার দাবি করে আসছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান অভিযোগ করছিল, ভারতের কিছু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নদীর পানির প্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে, যা একরকম চুক্তির লঙ্ঘন।

তবে এই প্রথমবার ভারত চুক্তি ‘স্থগিত’ ঘোষণা করল এবং যেহেতু ভারত উজানে অবস্থিত, ভৌগোলিকভাবে তার একটি বাড়তি সুবিধা রয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো, ভারত কি সত্যিই পাকিস্তানের পানি আটকে দিতে পারবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ প্রবাহের সময় ভারতের পক্ষে এই বিপুল পরিমাণ পানি আটকে রাখা প্রায় অসম্ভব। কারণ ভারতের কাছে সেই রকম বড় বাঁধ বা পানি সংরক্ষণের অবকাঠামো নেই। বেশিরভাগ বিদ্যুৎ প্রকল্প ‘রান-অব-দ্য-রিভার’ টাইপের, যেখানে পানি আটকে না রেখে সরাসরি প্রবাহ ব্যবহার করা হয়।

ভারতের পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ হিমাংশু ঠাক্কার বলেন, পাকিস্তানকে না জানিয়ে ভারত এখন তার বিদ্যমান অবকাঠামোতে পরিবর্তন আনতে পারে বা নতুন প্রকল্প তৈরি করতে পারে। আগে যেসব প্রকল্প পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার নিয়ম ছিল, এখন সে বাধ্যবাধকতা নেই।

তবে বাস্তব সমস্যাও আছে–অনেক এলাকায় দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থান ও স্থানীয় বিরোধের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। ২০১৬ সালে একটি জঙ্গি হামলার পর ভারত ঘোষণা করেছিল, তারা দ্রুত কয়েকটি বাঁধ ও প্রকল্প তৈরি করবে, কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি সীমিত।

কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, বর্ষার সময় নয় বরং শুষ্ক মৌসুমে যদি ভারত পানি আটকে দেয়, তখন পাকিস্তান সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ তখন পানির প্রাপ্যতা অনেক কম থাকে।

চুক্তির আওতায় ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে নদীর পানির তথ্যও ভাগাভাগি করতে হয়, যা বন্যা সতর্কতা ও সেচ, বিদ্যুৎ বা পানীয় জলের পরিকল্পনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখন ভারত এই তথ্য দেওয়া বন্ধ করতে পারে। যদিও পাকিস্তান বলেছে, ভারত আগেই খুব সীমিত তথ্য দিত।

আরেকটি ভয় হলো ‘ওয়াটার বোম্ব’, যেখানে উজানের দেশ (ভারত) হঠাৎ করে আটকে রাখা পানি ছেড়ে দিলে নিচের দিকে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে। ভারতের নিজের ভূখণ্ডেও তখন বন্যা হতে পারে, তবে ভারত এখন হঠাৎ করে সিল্ট পরিষ্কার করতে পারে, যা পাকিস্তানে ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এছাড়াও, আরও বড় একটি প্রেক্ষাপট আছে, সিন্ধু নদীর উৎস তিব্বতে, যা চীনের নিয়ন্ত্রণে। আর চীনও ভারতের ওপর একই রকম ভৌগোলিক প্রভাব রাখতে পারে, যেমনটা তারা ২০১৬ সালে করেছিল ব্রহ্মপুত্রের একটি উপনদী আটকে দিয়ে।

সর্বোপরি, পানি এখন কেবল একটি প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এটি একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারত ও পাকিস্তানের মতো পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এটি আরও সংবেদনশীল ইস্যু হয়ে উঠেছে।

 

সূত্র: বিবিসি

রাকিব

×