
পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে তাতে দুই দেশ সংঘাতে জড়াতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর এই উত্তেজনার শুরু। এ ঘটনার পেছনে পাকিস্তানের মদত রয়েছে বলে দাবি ভারতের। তবে ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই বলে সতর্ক করেছেন যে, ভারত যদি আক্রমণ করে তাহলে সর্বাত্মক যুদ্ধ হবে।
এ ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেয়। পাকিস্তানও একই কাজ করে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এ সময় তারা রাষ্ট্রপতির কাছে দুটি লাল ফাইল জমা দেন।
এই ফাইল ঘিরেই শুরু হয়েছে জল্পনা। কেউ কেউ বলছেন, ফাইল দুটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে সম্ভবত যুদ্ধের অনুমতি চেয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। একটি ফাইলে যুদ্ধের অনুমতি চাওয়া হয়। অপরটিতে অতি বিরূপ পরিস্থিতিতে ভারতের সর্বশেষ শক্তি ব্যবহারের সবুজ সংকেতের বিষয়টি উল্লেখ আছে। এই খবরের কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইসলামাবাদ। শুক্রবার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ভারত যদি আক্রমণ করে, অবশ্যই সর্বাত্মক যুদ্ধ হবে। খবর আলজাজিরা, এনডিটিভি ও ডন অনলাইনের।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। খাজা আসিফ জোর দিয়ে বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। ভারত যা কিছু শুরু করবে, তার বিরুদ্ধে আমরা কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাব। যদি কোনো সর্বাত্মক আক্রমণ বা এই জাতীয় কিছু হয়, তাহলে অবশ্যই একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ হবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে পূর্ণ মাত্রার সংঘাতের আশঙ্কা নিয়ে বিশ্বকে ভাবতে হবে। তবে খাজা আসিফ আশা প্রকাশ করে বলেন, চলমান পরিস্থিতি এখনো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।
ওই সাক্ষাৎকারে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্বীকার করেন যে, তার দেশ তিন দশক ধরে কিছু ‘সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সহায়তা ও অর্থায়ন’ করে আসছে। তিনি বলেন, আমরা প্রায় তিন দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য, যার মধ্যে ব্রিটেনও অন্তর্ভুক্ত, এই নোংরা কাজটি করে আসছি। এটি একটি ভুল ছিল এবং আমরা এর জন্য ভুগছি। স্কাই নিউজের উপস্থাপিকা ইয়ালদা হাকিম তাকে প্রশ্ন করেন, ‘সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে তো অর্থ ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে পাকিস্তানের?’ এর জবাবে আসিফ ওই মন্তব্য করেন।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, যদি পাকিস্তান ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে এবং পরবর্তীতে ৯/১১-এর পরে মার্কিন যুদ্ধে যোগ না দিত, তাহলে পাকিস্তানের ইতিহাস থাকত এক অনবদ্য।’এরপরই নিজ দেশের নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন খাজা আসিফ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, পাকিস্তানি নাগরিকরা যদি নিরাপদ না থাকেন, ভারতকেও এর পরিনাম ভোগ করতে হবে। পাকিস্তানের শহরগুলোতে ভারতের সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে, এমন তথ্য পাকিস্তানের কাছে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে খাজা আসিফ বলেন, ভারত যদি পাকিস্তানের কোনো শহরে কোনো ধরনের তৎপরতা চালায়, কোন পাকিস্তানি নাগরিকের ক্ষতি করে তবে পাকিস্তানও একইভাবে জবাব দেবে। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ভারতসহ যে কোনো স্থানে সংঘটিত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের নিন্দা জানাই আমরা। কিন্তু আমাদের নিজেদেরও আত্মরক্ষার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
ভারতকে অভিযুক্ত করে তিনি বলেন, আফগানিস্তানের টিটিপিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী রয়েছে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের ধরন ভারতের মতোই। কুলভূষণ যাদব সন্ত্রাসবাদে ভারতের জড়িত থাকার জীবন্ত প্রমাণ। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, বালুচ লিবারেশন আর্মি এবং তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তানের নেতারা ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
কারও কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়, আমরা সম্পূর্ণভাবে ভারতের যেকোনো অভিযানের জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। খাজা আসিফ বলেন, ভারত যদি কোনো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পুলওয়ামায় অতীতে যেভাবে কঠোর জবাব দেওয়া হয়েছিল, এবারও একইরকম প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে।
চলমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ও ভারতকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে বলেছে জাতিসংঘ। শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, একমাত্র সংযম ও ধৈর্য্য ধারনের মাধ্যমে উভয় দেশ বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে পারে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে কাশ্মীরে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়েবার দুই সন্দেহভাজন সদস্য আদিল হোসেন ও আসিফ শেখের বাড়ি বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। এ দুজনই পেহেলগাঁওয়ে মঙ্গলবারের জঙ্গি হামলায় জড়িত ছিল। তাদের বাড়ি দুটি পৃথক বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়।
বৃহস্পতিবার রাতভর কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখাজুড়ে গুলিবিনিময় করেছেন ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্যরা। ‘শত্রুভাবাপন্ন’ প্রতিবেশী দেশ দুটির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে শুক্রবার একাধিক গণমাধ্যমের খবরে এ কথা বলা হয়।
পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের সরকারি কর্মকর্তা সৈয়দ আশফাক গিলানি শুক্রবার বলেন, ‘কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর বিভিন্ন স্থানে সেনারা গুলি বিনিময় করেছে। তবে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর কোনো গুলি চালানো হয়নি। ভারতীয় সেনাবাহিনীও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, ছোট অস্ত্রের সীমিত গুলি চালানো হয়েছে। তবে গোলাগুলি শুরু করে পাকিস্তান। বিপরীতে ‘কার্যকর প্রতিক্রিয়া’ দেখানো হয়।