
ছবি: সংগৃহীত।
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স শহরে আঘাত হানে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনা। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারান হাজার হাজার মানুষ। শহরটি পানিতে তলিয়ে যায় পুরোপুরি। কিন্তু এই ঘটনার পরই মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে একটি অদ্ভুত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব—এই হারিকেন আসলে কোনো সাধারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল না। বরং, এর পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোপন প্রকল্প: হারপ (HAARP)।
হারপ কী?
হারপ-এর পূর্ণরূপ হলো High Frequency Active Auroral Research Program। এটি যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় অবস্থিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকল্প, যার মূল উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার স্তর নিয়ে গবেষণা করা। এই স্তরে সূর্যের রশ্মি ও মহাজাগতিক কণার প্রভাবে গ্যাসগুলো আয়নে পরিণত হয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন কীভাবে এই স্তরে রেডিও তরঙ্গ আচরণ করে, যা স্যাটেলাইট যোগাযোগ, সামরিক রেডিও সংকেত এবং সাবমেরিনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসীরা দাবি করেন, হারপ প্রকল্পটি আসলে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি একটি গোপন অস্ত্র। তাদের মতে, হারপ দিয়ে শুধু ঘূর্ণিঝড় বা বৃষ্টিই নয়, ভূমিকম্পও সৃষ্টি করা সম্ভব। এমনকি মানুষের মস্তিষ্ক ও আবেগও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
তারা যুক্তি দেন, বড় দুর্যোগের আগে আকাশে অস্বাভাবিক মেঘ, আলোর ঝলকানি বা রহস্যময় আলো দেখা যায়। ইন্টারনেটে এই ধরনের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যা তারা মনে করেন হারপ থেকে নিঃসৃত রেডিও তরঙ্গের প্রভাব।
যে দুর্যোগগুলোকে হারপের সঙ্গে যুক্ত করা হয়:
- ২০১০ সালের হাইতি ভূমিকম্প
- ২০১১ সালের জাপানের তোহোকু ভূমিকম্প
- পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যা
- ২০২৪ সালের হারিকেন হেলেন ও মিল্টন
- তাদের দাবি, এই সব দুর্যোগ হারপের গোপন পরীক্ষার ফল।
বিজ্ঞানীরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হারপ প্রকল্পের কোনো গোপন উদ্দেশ্য নেই। প্রকল্পটির ওয়েবসাইট সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত এবং তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফলও প্রকাশ করা হয় নিয়মিত। তারা বলেন, ভূমিকম্পের আগে আকাশে দেখা যাওয়া আলো আসলে earthquake lights, যা ভূকম্পনের সময় সৃষ্ট বৈদ্যুতিক চার্জ থেকে তৈরি হয়। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ঘটনা।
তবে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অনুসারীরা এত সহজে মানতে রাজি নন। তাদের দাবি, সরকার প্রকৃত তথ্য গোপন করছে। তাদের বিশ্বাস, হারপ প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্ক ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যদিও এ ধরনের কোনো দাবির পক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
হারপ কি শুধুই একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকল্প, নাকি সত্যিই এটি প্রকৃতি ও মানুষের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েমের এক ভয়ঙ্কর অস্ত্র? এই প্রশ্নের উত্তর আপনি নিজেই খুঁজে নিন। যাচাই করুন তথ্যপ্রমাণ, মিলিয়ে দেখুন যুক্তি ও অযুক্তি—তারপরই সিদ্ধান্ত নিন।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=ngrKhkIHMSY&ab_channel=JamunaTV
নুসরাত