
(বাঁ দিকে) জেনারেল পারভেজ মুশারফ। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির (ডান দিকে)। ছবিঃ সংগৃহীত
ভারতের প্রাক্তন সেনাকর্তা সুব্রত সাহা কাশ্মীরের পহেলগাঁও এ সম্প্রতি হওয়া সন্ত্রাসী হামলার জের ধরে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে পাকিস্তান পারবে না। তাই পাকিস্তান আর সরাসরি যুদ্ধ করতে চায় না। পহেলগাঁওয়ে যেমন করেছে, তেমন ‘অপ্রচলিত যুদ্ধ’ই (অ্যাসিমেট্রিক ওয়ারফেয়ার) পাকিস্তান চালিয়ে যেতে চায়।
সুব্রত সাহা বলেন, প্রত্যক্ষ যুদ্ধে পারবে না জেনেও পাকিস্তান এই ধরনের নাশকতা কেন চালায়, তা বুঝতে গেলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অবস্থার বিষয়ে জানতে হবে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এই মুহূর্তে নিজের দেশে কোণঠাসা। শাহবাজ শরিফের সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল নয়। পাক সেনাতেও বিভাজন তৈরি হয়েছে। উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বিরাট অংশ জেনারেল মুনিরের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে, তাঁর অপসারণ চাইছে। দেশের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের বাহিনী প্রচণ্ড মার খাচ্ছে। খাইবার-পাখতুনখোয়ায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে। তালিবান-শাসিত আফগানিস্তানের সঙ্গে সংঘাত তৈরি হচ্ছে। বালোচিস্তানের বিদ্রোহীদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে। যে লড়াইয়ের সাম্প্রতিকতম ফলশ্রুতি ‘জ়াফর এক্সপ্রেস’ হাইজ্যাক হয়ে যাওয়া। যে ট্রেনে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর লোকজনই সবচেয়ে বেশি যাতায়াত করে। পরিস্থিতি এমনই যে, পাকিস্তানের সাধারণ জনমতও জেনারেল মুনিরের বিপক্ষে।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখার জন্য এমন এক আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছেন, যাতে পুরো পাকিস্তানে একজোট আবেগ সৃষ্টি হয়। কয়েকদিন আগে এক ভাষণে তিনি পাকিস্তানের অস্তিত্ব ও হিন্দুদের থেকে তাদের ‘ভিন্নতা’ নিয়ে বক্তব্য দেন, যা পরে ভাইরাল করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, ভারতে নাশকতা ঘটলে সেই ভাষণের সঙ্গে জনমানসে তা মিলিয়ে ফেলা সহজ হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতকে সরাসরি আক্রমণ করার মতো সাহস পাকিস্তানের নেই, তবুও তারা নাশকতা চালায় কারণ তারা বিশেষ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নেয়। বর্তমানে ভারতের পূর্ব সীমান্তে (বাংলাদেশ) অনুকূল পরিস্থিতি না থাকায় মুনির সাহস পেয়েছেন, এবং মনে করছেন চীনেরও সমর্থন পেতে পারেন।
এই পন্থা আগেও ব্যবহৃত হয়েছে—জেনারেল পারভেজ মুশারফ ২০০১ সালে ভারতের সংসদে হামলার ঘটনার মাধ্যমে নিজেকে পাকিস্তানে আরও শক্তিশালী করেন। এখন জেনারেল মুনিরও ঠিক সেই পথেই হেঁটে নিজের অবস্থান মজবুত করতে চাইছেন।
মুমু