
ছবিঃ সংগৃহীত
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অনন্য সুন্দর পর্যটন শহর পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হয়েছে পুরো উপত্যকা। শ্রীনগর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের এই এলাকায় সংঘটিত ঘটনায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক মানুষ, আহতের সংখ্যা আরও বেশি। শোকাচ্ছন্ন এই ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তেও।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF) নামের একটি সংগঠন। তাদের দাবি, কাশ্মীরে বাইরের রাজ্যের হাজারো বাসিন্দাকে বসবাস ও কাজের অনুমতি দেওয়ার প্রতিবাদে এ হামলা চালানো হয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে TRF-এর যোগসাজশ থাকতে পারে।
দিল্লিতে মোদি সরকার দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে, জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি ও উন্নয়নের যুগ চলছে। কিন্তু এই রক্তক্ষয়ী হামলা ফের প্রশ্নের মুখে ফেলেছে কেন্দ্রের ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি শুধুমাত্র বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী তৎপরতা নয়; বরং সরকারের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া।
২০১৯ সালে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অঞ্চলটিকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করে মোদি সরকার। সরকারের ভাষায়, এটি ছিল কাশ্মীরকে মূলধারায় আনতে একটি ‘পুনর্গঠন’ প্রক্রিয়া। তবে বাস্তবতা ভিন্ন—সেনা ও আধা-সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বেড়েছে দ্বিগুণ, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকার সীমিত হয়েছে, প্রায়শই ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হচ্ছে।
এছাড়া, কাশ্মীর ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মোদি সরকারের নানা নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ আইন নিয়ে আন্দোলন, নাগপুরে আওরঙ্গজেবের সমাধি ঘিরে সংঘর্ষ, মণিপুরের জাতিগত সহিংসতা, কৃষি আইনবিরোধী পাঞ্জাবের আন্দোলন এবং দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, কেরালা ও তেলেঙ্গানায় উগ্র জাতীয়তাবাদবিরোধী প্রতিক্রিয়া—সব মিলিয়ে দেশের রাজনীতিতে দেখা দিয়েছে গভীর অসন্তোষ।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, পেহেলগামের হামলায় পর্যটকরাই প্রধান লক্ষ্য ছিল না, বরং এটি ছিল কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা। পাশাপাশি হিন্দু তীর্থযাত্রীদের লক্ষ্য করে হামলার কারণে ধর্মীয় উত্তেজনা আরও বাড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এই ঘটনার পর মোদি সরকারের দমনমূলক নীতি ও নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোর হাতে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা নতুন করে সহিংসতা উসকে দিতে পারে। সামগ্রিক পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, দেশের ভেতর ও বাইরে তৈরি হতে থাকা প্রতিরোধের মুখে বিজেপির “এক ভাষা, এক জাতি” নীতি কার্যকরভাবে টিকতে পারছে না।
সাম্প্রতিক এই হামলা আবারো প্রশ্ন তোলে—ক্ষমতায় টিকে থাকতে মোদি সরকার কতটা প্রস্তুত, এবং এই অস্থিরতা কবে গিয়ে থামবে?
তথ্যসূত্রঃ https://www.facebook.com/share/1Amb9zYMNQ/
মারিয়া