ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

যে কারণে হামাস কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ১৭:৪৪, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

যে কারণে হামাস কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না

ছবি: সংগৃহীত

গাজা উপত্যকার টানা যুদ্ধ, ধ্বংস ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেও একটি প্রশ্ন এখন বারবার ঘুরে ফিরে আসছে আন্তর্জাতিক মহলে: হামাস কেন আত্মসমর্পণ করছে না? ইসরায়েলের চাপ, সামরিক অভিযান ও নানা প্রস্তাব সত্ত্বেও এই সশস্ত্র গোষ্ঠী নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসছে না। এর পেছনে রয়েছে আদর্শিক বিশ্বাস, রাজনৈতিক কৌশল এবং ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা।

হামাস নিজেদের শুধু একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে নয়, বরং ‘প্রতিরোধ আন্দোলন’ হিসেবে উপস্থাপন করে। তাদের দৃষ্টিতে ইসরায়েল একটি দখলদার রাষ্ট্র এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করাই তাদের অস্তিত্বের মূল ভিত্তি। এই প্রতিরোধ থেকে সরে আসা মানে তাদের আদর্শিক অবস্থান বিসর্জন দেওয়া, যা তারা আত্মসমর্পণের শামিল মনে করে।

গাজায় হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানির পর এবং বিপুলসংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুতির প্রেক্ষাপটে আত্মসমর্পণ করলে তা জনগণের চোখে ‘ত্যাগের অপচয়’ হিসেবে বিবেচিত হবে। রাজনৈতিকভাবে এটি হামাসের জন্য আত্মহননের মতো।

২০০৭ সালে ফাতাহর সঙ্গে বিভাজনের পর থেকে হামাসের অবস্থান ছিল স্পষ্ট: আলোচনা নয়, প্রতিরোধই পথ। ফাতাহর আলোচনাভিত্তিক কৌশলকে তারা ব্যর্থ মনে করে। হামাসের মতে, অতীতের শান্তি চুক্তি ফিলিস্তিনিদের অধিকারের সুরক্ষা দিতে পারেনি, বরং তাদের আরও পিছিয়ে দিয়েছে।

বর্তমানে হামাস দুটি মৌলিক দাবি নিয়ে অবস্থান করছে:
১. ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা উপত্যকা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার
২. গাজার ওপর আরোপিত অবরোধের স্থায়ী অবসান

এই দাবি পূরণ না হলে তারা কোনো ধরনের সাময়িক সুবিধাকেও ‘চাপের কৌশল’ হিসেবে বিবেচনা করে এবং প্রত্যাখ্যান করে। হামাস মনে করে, অস্ত্র হাতে থাকার অর্থ তারা এখনও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। আত্মসমর্পণ করলে তারা কেবল রাজনৈতিকভাবে নয়, কৌশলগতভাবেও প্রান্তিক হয়ে পড়বে।

এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও গোষ্ঠী থেকে হামাস এখনো নৈতিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা পাচ্ছে। এই সহায়তাই তাদের প্রতিরোধ শক্তিকে টিকিয়ে রাখার অন্যতম ভিত্তি। সব মিলিয়ে হামাসের আত্মসমর্পণ না করার পেছনে রয়েছে জটিল রাজনৈতিক, আদর্শিক ও কৌশলগত বাস্তবতা। আর এই বাস্তবতা ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষের দ্রুত সমাধানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একমাত্র বাস্তবভিত্তিক, পারস্পরিক স্বীকৃতিপূর্ণ রাজনৈতিক চুক্তিই হতে পারে এই সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।

ফারুক

×