ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

কাশ্মীরে হামলা, আবারও ভাইরাল পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বক্তব্য

প্রকাশিত: ১৭:১৮, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

কাশ্মীরে হামলা, আবারও ভাইরাল পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বক্তব্য

ছবি : সংগৃহীত

কাশ্মীরের পাহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের একটি ভাষণ এখন ব্যাপক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। ইসলামাবাদে ‘ওভারসিজ পাকিস্তানি কনভেনশন’-এ ১৬ এপ্রিল দেওয়া তাঁর বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর, এর সময়কাল ও বক্তব্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।

ভাষণে জেনারেল মুনির কাশ্মীরকে পাকিস্তানের "জাগুলার ভেইন" (প্রাণনালী) বলে উল্লেখ করেন এবং কাশ্মীরিদের “বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের” প্রতি পাকিস্তানের অব্যাহত সমর্থনের কথা জানান। তিনি বলেন,
“আমাদের অবস্থান একেবারে পরিষ্কার—এটা আমাদের জাগুলার ভেইন ছিল, থাকবে। আমরা আমাদের কাশ্মীরি ভাইদের ভুলবো না, তাদের সংগ্রামে একা ছেড়ে দেব না।”

সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি দ্বি-জাতি তত্ত্বের পক্ষে সওয়াল করেন, বলেন:
“আপনাদের সন্তানদের পাকিস্তানের ইতিহাস জানাতে হবে। আমাদের পূর্বপুরুষরা বুঝেছিলেন—আমরা হিন্দুদের থেকে প্রতিটি দিকেই আলাদা: আমাদের ধর্ম, রীতি, সংস্কৃতি, চিন্তাভাবনা ও আকাঙ্ক্ষা। সেই পার্থক্যের ভিত্তিতেই দ্বি-জাতি তত্ত্ব গড়ে উঠেছিল।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা এক জাতি নই, আমরা দুই জাতি। এই সত্যটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা জরুরি।”

ভারতের কড়া প্রতিক্রিয়া
জেনারেল মুনিরের বক্তব্যে ভারত তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল বলেন:
“একটি বিদেশি বিষয় কিভাবে ভারতের জাগুলার ভেইনে থাকতে পারে? জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। পাকিস্তানের সঙ্গে এর একমাত্র সম্পর্ক হচ্ছে, তারা যেন বেআইনিভাবে দখল করা এলাকা ছেড়ে দেয়।”

তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান যতই চেষ্টা করুক, সন্ত্রাসবাদের বিশ্বজুড়ে কেন্দ্র হিসেবে তাদের ভাবমূর্তি বদলাবে না।” তিনি এ প্রসঙ্গে ২৬/১১ মুম্বাই হামলায় অভিযুক্ত তাহাওয়ার রানা’র প্রত্যার্পণের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

পাহেলগামে কী ঘটেছিল?
মুনিরের বক্তব্যের এক সপ্তাহ পরেই, কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পাহেলগামের বাইসরান উপত্যকায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়। "মিনি সুইজারল্যান্ড" নামে পরিচিত এই এলাকায় মঙ্গলবার দুপুরে চালানো এই হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের অধিকাংশই ভারতীয় পর্যটক এবং একজন নেপালি নাগরিক। আহত হন আরও অন্তত ১৭ জন।

এটি ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর ভারতের মাটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ বেসামরিক প্রাণহানির ঘটনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভিডিওতে দেখা যায়—ঘাসে ছড়িয়ে রয়েছে নিথর দেহ, আর্তনাদ করছেন আহতরা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই খবর পেয়ে সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশে ফেরেন এবং বলেন, “এই হামলার দায়ীরা ছাড়া পাবে না।”

হামলার দায় স্বীকার কে করেছে?
‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF) নামে পরিচিত একটি জঙ্গি গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই গোষ্ঠী পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার ছদ্ম রূপ বলে মনে করা হয়। TRF তাদের বিবৃতিতে বলে—কাশ্মীরে ৮৫,০০০ ‘বহিরাগত’ বসতি স্থাপন করেছে ভারত সরকার, যার বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকেই এই হামলা।

যদিও TRF-এর দায় স্বীকারের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে, ভারতের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। কিছু সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এই হামলার পেছনে লস্কর নেতা সাইফুল্লাহ কাসুরি ওরফে খালিদের হাত থাকতে পারে, তবে সরকারি স্তরে কিছু বলা হয়নি।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
এই হামলার সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে ২০০০ সালের চিট্টিসিংপুরা গণহত্যার, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ভারত সফরের ঠিক আগের দিন অনন্তনাগেই ৩৬ শিখ নাগরিককে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। পাহেলগাম এবং চিট্টিসিংপুরা—উভয়ই অনন্তনাগ জেলায় অবস্থিত।

হামলার দিনই ভারতের সফরে ছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, আর প্রধানমন্ত্রী মোদী ছিলেন সৌদি আরবে।

ঠিক সেই দিনেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তুরস্ক সফরে ছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপন করেন। পাকিস্তানভিত্তিক দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, শাহবাজ সেখানে কাশ্মীর ইস্যুতে তুরস্কের “অবিচল সমর্থনের” জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তথ্যসূত্রঃ https://english.mathrubhumi.com/news/india/speech-of-pakistan-army-chief-days-before-pahalgam-terror-attack-raises-questions-1.10534511

মারিয়া

×