
ছবি: সংগৃহীত
কাশ্মীরের পাহাড়ি এলাকায় ২৬ জন পর্যটককে হত্যার ঘটনায় জঙ্গিদের ধরতে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। মঙ্গলবারের এই বর্বরোচিত হামলার পেছনে চারজন বন্দুকধারী জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “এই ন্যাক্কারজনক কাজের পেছনে যারা রয়েছে, সামনে কিংবা পেছনে থেকে, তারা খুব শিগগিরই আমাদের জবাব শুনবে—জোরালো ও পরিষ্কার ভাষায়।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের নয়; যারা ছায়ার আড়াল থেকে এই পরিকল্পনায় যুক্ত, তাদেরও আমরা খুঁজে বের করব।”
কাশ্মীর অঞ্চলে হাজার হাজার সশস্ত্র পুলিশ ও সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। চেকপোস্ট স্থাপন, যানবাহনে তল্লাশি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ—সবই চলছে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আক্রমণকারীদের বিচারের আওতায় আনতেই আমাদের অভিযান চলছে।”
‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামের একটি কম পরিচিত জঙ্গিগোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ৮৫ হাজারেরও বেশি ‘বহিরাগত’ কাশ্মীরে বসবাস শুরু করায় সেখানে ‘গণতান্ত্রিক পরিবর্তন’ ঘটছে।
হামলাটি ঘটে জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগাম এলাকার এক খোলা চারণভূমিতে। নিহতদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় ও একজন নেপালের নাগরিক রয়েছেন। এটি ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর ভারতের বেসামরিক জনগণের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে বুধবার সকালে দিল্লি ফিরে আসেন। এরপরই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বিশেষ ক্যাবিনেট বৈঠক ডাকা হয়।
এই হামলা মোদি ও বিজেপির জন্য বড় ধাক্কা, যারা কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর অঞ্চলটিতে শান্তি ও উন্নয়নের দাবি করে আসছিলেন।
গত বছর হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি বাস খাদে পড়ে ৯ জন নিহত হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। তবে এবার পর্যটকদের সরাসরি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, যা অতীতে বিরল।
‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ বুধবার এক নতুন বিবৃতিতে দাবি করে, “হামলার শিকার ব্যক্তিরা সাধারণ পর্যটক ছিলেন না, বরং তারা ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।”
এই ঘটনার পরপরই পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই দ্রুত অঞ্চলটি ছেড়ে চলে যান। শ্রীনগর থেকে অতিরিক্ত ফ্লাইট চালু করে এয়ারলাইনগুলো। টেলিভিশন ফুটেজে দেখা যায়, পর্যটকরা হোটেল ছাড়ছেন এবং ট্যাক্সিতে রওনা হচ্ছেন।
দিল্লির পর্যটক সমীর ভরদ্বাজ বলেন, “এই পরিস্থিতিতে কীভাবে আমরা ঘোরাঘুরি চালিয়ে যেতে পারি? আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
পাহালগামের ট্যাক্সিচালক গুলজার আহমদ বলেন, “এই হামলার কারণে আমাদের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কিন্তু তার চেয়েও বড় বিষয় মানুষের প্রাণহানি।”
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, বর্তমানে ভারত সফররত, হামলাটিকে “বিধ্বংসী সন্ত্রাসী হামলা” বলে অভিহিত করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে লেখেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।”
ভ্লাদিমির পুতিন, জর্জিয়া মেলোনি ও অ্যান্তোনিও গুতেরেসসহ বিশ্বনেতারাও হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেন, “বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা কোনো পরিস্থিতিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, “এই হৃদয়বিদারক সন্ত্রাসী হামলার পর অতিথিদের উপত্যকা ছাড়তে দেখা দুঃখজনক, তবে আমরা সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।”
তিনি প্রশাসনকে পর্যটকদের নির্বিঘ্নে চলে যাওয়ার সুবিধা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন।
তিনি জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে কাশ্মীরে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। ২০১৯ সালে ভারত কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা প্রত্যাহার করে, রাজ্যকে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে এবং বাইরের লোকদের ভূমি ও চাকরির সুযোগ উন্মুক্ত করে। এরপর থেকেই সেখানে হামলার সংখ্যা বেড়েছে।
যদিও কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী এই হামলায় জড়িত, তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত খান বলেন, “এই হামলায় পর্যটকদের প্রাণহানিতে পাকিস্তান উদ্বিগ্ন” এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শহীদ