
মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও গাজার রক্তপাত থামাতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকার প্রধান ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চাই।”
কিন্তু ইসরাইল সেই আহ্বানে কর্ণপাত করেনি। এর আগেও বহুবার এই শান্তির বার্তা দিয়ে গেছেন পোপ, তবে বারবারই তাঁর আহ্বান প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তবুও থেমে থাকেননি তিনি। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন মানবতা ও শান্তির পক্ষে।
পোপ ফ্রান্সিস মৃত্যুবরণ করেন ইস্টার সানডের পরের দিন, সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি ভাটিকানের কাসা সান্তামার্তায় নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ইস্টারের আগের দিন তিনি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যানসের সঙ্গে ভাটিকানে সাক্ষাৎ করেন। ইতালিতে সফররত ভ্যানসের সঙ্গে শান্তি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। এই সাক্ষাৎ প্রমাণ করে, মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্তও মানবতা ও আন্তধর্মীয় সংলাপকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন তিনি।
এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পোপ ফ্রান্সিসকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর বেশ কয়েকবার তাঁর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। ভাটিকান সূত্রে জানা গেছে, শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতার কারণে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। কিছুদিন আগে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন তিনি, কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ শোকাহত। এক হৃদয়বান, সংবেদনশীল এবং সহনশীল নেতার প্রস্থান হলো যিনি মানুষের হৃদয়ে আশার আলো জ্বালিয়ে গেছেন।
ভাটিকানের দাপ্তরিক ওয়েবসাইট দি হলিসি জানায়, পোপ ফ্রান্সিসের আসল নাম ছিল জর্জ মারিও বার্গলিও। তিনি ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্সে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ধর্মযাজক হন এবং ১৯৯৮ সালে আর্জেন্টিনার আর্চবিশপ নির্বাচিত হন।
২০১৩ সালে তৎকালীন পোপ বেনেডিক্ট পদত্যাগ করলে তিনি ক্যাথলিক চার্চের নতুন পোপ নির্বাচিত হন এবং নাম নেন ‘ফ্রান্সিস’। তিনি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ এবং ১২ বছর ধরে রোমান ক্যাথলিক চার্চ ও ভাটিকান সিটির নেতৃত্বে ছিলেন।
তাঁর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে অসুস্থতা থাকলেও তিনি সব সময়ই মানবতা, শান্তি ও সহনশীলতার বার্তা ছড়িয়ে গেছেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে তাঁর একটি ফুসফুসের অংশ অপসারণ করা হয়েছিল, তারপরও তিনি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে।
সূত্র:https://tinyurl.com/34b2a7vm
আফরোজা