ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

ভারতের কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুক হামলার সর্বশেষ যা জানা গেল

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ২২ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২১:৪১, ২২ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুক হামলার সর্বশেষ যা জানা গেল

ছবি: সংগৃহীত

ভারতশাসিত কাশ্মীরে মঙ্গলবার ভয়াবহ এক বন্দুক হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন। একটি পর্যটক দলের ওপর চালানো এই হামলাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে বেসামরিক মানুষের ওপর অন্যতম মর্মান্তিক হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছে কর্তৃপক্ষ। হামলাটি ঘটে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে, যা রাজ্যের রাজধানী শ্রীনগর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন পর্যটন কেন্দ্র।

এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, এই হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তবে নিহতের সংখ্যা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। ঘটনার সময় তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে তথ্য দিয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে এএফপি জানিয়েছিল, একটি রাজনৈতিক সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এই বর্বর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, "পহেলগামে পর্যটকদের ওপর কাপুরুষোচিত এই হামলা অত্যন্ত মর্মান্তিক, এতে পাঁচজন নিহত ও আরও অনেকে আহত হয়েছেন।"

এখনও পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। ১৯৮৯ সাল থেকে কাশ্মীরে চলমান বিদ্রোহের পেছনে রয়েছে অঞ্চলটির স্বাধীনতা বা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার দাবির আন্দোলন। কাশ্মীরের একটি অংশ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, উভয় দেশই পুরো অঞ্চলের ওপর দাবি করে থাকে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই হামলাকে "নৃশংস" আখ্যা দিয়ে বলেন, হামলাকারীরা কোনোভাবেই বিচার থেকে রেহাই পাবে না। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও জানিয়েছেন, তিনি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক ট্যুর গাইড ওয়াহিদ জানান, গুলির শব্দ শুনে তিনি ছুটে যান এবং আহতদের ঘোড়ায় তুলে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনেন। তিনি বলেন, "আমি কয়েকজনকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখলাম, মনে হচ্ছিল তারা মারা গেছেন।"

এই নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে এটি অন্যতম ভয়াবহ হামলা।” তিনি এটিকে ‘আমাদের অতিথিদের ওপর’ চালানো এক নিষ্ঠুর ও ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেন।

কাশ্মীর অঞ্চলে ভারতের নিযুক্ত গভর্নর মনোজ সিনহাও এই কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এই ঘৃণ্য হামলার পেছনে যারা রয়েছে, তারা কোনোভাবেই শাস্তির বাইরে থাকবে না।”

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুইভাগে বিভক্ত করার পর থেকে পর্যটনকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের প্রচার চালিয়ে আসছে। সরকার দাবি করে, এই পদক্ষেপের পর সংঘাত অনেকাংশে কমেছে এবং অঞ্চলটিতে শান্তি ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

২০২৪ সালে কাশ্মীরে প্রায় ৩৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন ভারতীয় নাগরিক। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই ২০২৩ সালে শ্রীনগরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জি২০ পর্যটন সম্মেলন।

তবে এই হামলা নতুন করে প্রশ্ন তুলছে কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে। বিজেপি নেতা রবীন্দ্র রায়না বলেন, "এই কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসীরা নিরস্ত্র, নিরীহ পর্যটকদের টার্গেট করেছে। আহত পর্যটকদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় হাসপাতালে।"

ভারত প্রায়ই এ ধরনের হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। তবে ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে জানায়, তারা কেবল কাশ্মীরের আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবিকে নৈতিকভাবে সমর্থন করে।

এর আগে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় ৪০ জন নিরাপত্তা সদস্য নিহত হয়েছিলেন। আর বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সর্বশেষ বড় হামলাটি হয়েছিল ২০০০ সালের মার্চ মাসে, যেখানে ৩৬ জন নিহত হয়েছিলেন।

পহেলগামের সর্বশেষ এই হামলা তাই নতুন করে মনে করিয়ে দিচ্ছে, কাশ্মীরের পরিস্থিতি এখনও কতটা অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ।

এম.কে.

×