ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

রাশিয়া ও চীন সফরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ১৯:২০, ২২ এপ্রিল ২০২৫

রাশিয়া ও চীন সফরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটতে যাচ্ছে

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব রাজনীতির আড়ালে ধীরে ধীরে জমে উঠছে নতুন এক উত্তেজনা, যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হুমকি দিচ্ছে— চুক্তি না হলে সামরিক হামলা হবে। অন্যদিকে, ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যদি আক্রমণ হয়, তার জবাব কঠিন হবে। এই উত্তেজনার মধ্যে ইরানের কূটনৈতিক তৎপরতা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

সম্প্রতি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি হঠাৎ করেই সফর করেছেন রাশিয়া ও চীন। এই সফরকে কেবল কূটনৈতিক সৌজন্য সফর বললে ভুল হবে। বরং এর পেছনে রয়েছে এক গভীর কৌশলগত বার্তা। প্রথমেই তিনি যান মস্কোতে, যেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে একটি রুদ্ধদার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যদিও আলোচনার সব বিষয় প্রকাশ করা হয়নি, কূটনৈতিক সূত্র জানায়— মূল আলোচ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির প্রেক্ষিতে রাশিয়ার অবস্থান।

রাশিয়া স্পষ্ট করেছে, ইরান তাদের কৌশলগত মিত্র। এই দুই দেশের সম্পর্ক ৫০০ বছরের পুরনো এবং দিনকে দিন তা আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। রাশিয়া ইরানকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপ কমিয়ে দিচ্ছে।

মস্কো সফর শেষে আরাকচি যান চীনের রাজধানী বেইজিং। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেও আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ইরানের পারমাণবিক ইস্যু। চীন ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী করেছে এবং বলেছে, সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণ আলোচনায় বসতে হবে। তারা চায় না ইরান আগের মতো এমন কোনো চুক্তিতে ফিরে যায় যা তার স্বাধীনতাকে সীমিত করে।

এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়া, চীন ও ইরানের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক দৃঢ় রাজনৈতিক মিত্রতা, যা পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

২০১৫ সালের জেসিপিওএ (JCPOA) চুক্তির মাধ্যমে যখন ইরান তার পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করেছিল, তখন অনেকেই আশার আলো দেখেছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে এককভাবে চুক্তি থেকে সরিয়ে নিলে শুরু হয় নতুন করে উত্তেজনা। এখন ২০২৫ সালে ট্রাম্পের আবার ক্ষমতায় ফিরে আসা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করবে না। তবে ওমানের মাধ্যমে পরোক্ষ আলোচনায় প্রস্তুতি রয়েছে। এই অবস্থানে রাশিয়া বলছে, তেহরানকে কোনো চুক্তিতে জোর করে পাঠানো যাবে না এবং তারা কূটনৈতিকভাবে ইরানের পাশে থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরান এখন যে কূটনৈতিক চালগুলো দিচ্ছে, তা খুবই সচেতন ও কৌশলী। তারা জানে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মানে দুর্বলতা প্রকাশ। তাই তারা চীন ও রাশিয়ার সমর্থনকে পুঁজি করে এক নতুন কূটনৈতিক বলয় গড়ে তুলছে।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো— ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান কি কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে? যুক্তরাষ্ট্র কি তার আগের ভুল থেকে শিক্ষা নেবে?

একইসঙ্গে এই সফরের মাধ্যমে একটি বার্তা স্পষ্ট হয়েছে— ইরান এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং প্রস্তুত। তার পাশে রয়েছে বিশ্বের দুই প্রধান শক্তি— রাশিয়া ও চীন। এই ত্রিমুখী সম্পর্ক কেবল একটি রাজনৈতিক বন্ধুত্ব নয়, বরং একটি নতুন আন্তর্জাতিক সমীকরণ, যা ভবিষ্যতের বিশ্ব কূটনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/Lm3HPMlYZ-4?si=6LHj6ztS6ptV1sZ0

এম.কে.

×