
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বব্যাপী যখন প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে—যেমন গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, অ্যামাজন—চীন তখন ইচ্ছাকৃতভাবে এদের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ফলাফল হয়েছে ঠিক উল্টো—একঘরে হওয়ার পরিবর্তে চীন গড়ে তুলেছে নিজস্ব এক 'ডিজিটাল সভ্যতা', যা এখন প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তার করছে। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে চীন চালু করে “গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না”—একটি রাষ্ট্রীয় অনলাইন সেন্সরশিপ ব্যবস্থা যা বিদেশি ওয়েবসাইট, অ্যাপ এবং সার্ভিস ব্লক করে।
এই কড়াকড়ির কারণে চীনের নাগরিকরা এক ভিন্নধর্মী ডিজিটাল বাস্তবতায় বসবাস করতে বাধ্য হন। তবে চীন এই শূন্যস্থান পূরণ করে দেয় নিজেদের প্রযুক্তির মাধ্যমে। চীন শুধু বিদেশি প্রযুক্তির বিকল্প তৈরি করেনি, বরং নিজেদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিকে করেছে আরও শক্তিশালী ও বিস্তৃত। নিচে চীনের কয়েকটি প্রধান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও তাদের প্রভাব তুলে ধরা হলো:
🔹 Baidu — চীনের নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন ও AI গবেষণায় অগ্রগামী।
🔹 WeChat (Tencent) — শুধু চ্যাট অ্যাপ নয়, এটি চীনে সামাজিক যোগাযোগ, মোবাইল পেমেন্ট, রাইড শেয়ারিং ও অফিসিয়াল পরিষেবা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু।
🔹 Alibaba — অ্যামাজনের বিকল্প নয়, বরং অনেক দিক থেকে তাকে ছাড়িয়ে যাওয়া একটি ই-কমার্স ও ফিনটেক সাম্রাজ্য।
🔹 Douyin — TikTok-এর চীনা সংস্করণ; এতে রয়েছে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কনটেন্ট ফিল্টারিং ও শৃঙ্খলাপূর্ণ কনটেন্ট ব্যবস্থাপনা।
🔹 Huawei — ৫জি নেটওয়ার্ক নির্মাণে বিশ্বনেতা।
🔹 DJI — বিশ্বের ৭০% বাণিজ্যিক ড্রোন বাজার দখলে।
🔹 SenseTime, Megvii — AI এবং facial recognition প্রযুক্তির পথিকৃৎ।
চীনের এই কৌশল শুধু ব্যবসার কথা বলে না; এটি এক রাষ্ট্রীয় দর্শন বহন করে—যেখানে স্বনির্ভরতা, তথ্যনিয়ন্ত্রণ ও প্রযুক্তিগত আধিপত্য মিলেমিশে তৈরি করে এক বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা। চীনের মতে, “নিয়ন্ত্রিত তথ্যনীতিই টেকসই সমাজ ও প্রযুক্তি নিশ্চিত করে।” অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্ব এ ধারা দেখে তথ্যের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের বিরোধিতা হিসেবে। চীনের প্রযুক্তি এখন কেবল ঘরোয়া ব্যবহারে সীমাবদ্ধ নয়। তারা নিজেদের উদ্ভাবন রপ্তানি করছে বিশ্বজুড়ে ।
চীনের এই উত্থান দেখায়, প্রযুক্তিতে আধিপত্য কেবল উদ্ভাবনের বিষয় নয়, রাষ্ট্রীয় কৌশল, নিয়ন্ত্রণ ও আত্মনির্ভরতার ফল। যেখানে বিশ্ব তথ্যের উন্মুক্ততার পক্ষে, চীন দেখাচ্ছে এক নিয়ন্ত্রিত কিন্তু কার্যকরী প্রযুক্তি সাম্রাজ্য—যা আজ পশ্চিমা প্রযুক্তি জায়ান্টদের জন্যও এক বড় চ্যালেঞ্জ
ফারুক