
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব যেখানে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব ও অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের ছায়ায় পরিচালিত, সেখানে সেই ধারা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রেখেও চীন গড়ে তুলেছে এক আলাদা ‘প্রযুক্তি সাম্রাজ্য’। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মার্কিন কোম্পানিগুলো নিষিদ্ধ রেখেও চীন আজ হয়ে উঠছে প্রযুক্তির অন্যতম নিয়ন্ত্রক শক্তি।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু নিয়ন্ত্রণের চর্চা নয়—বরং এক কৌশলী, পরিকল্পিত এবং স্থিতিশীল প্রযুক্তি উত্থানের নাম, যা আজ বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
২০০০ সালের গোড়ার দিকেই চীন চালু করে ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না’—একটি সর্বাত্মক অনলাইন সেন্সরশিপ ব্যবস্থা। এর আওতায় একে একে দেশজুড়ে নিষিদ্ধ করা হয়: ফেসবুক (২০০৯), গুগল সার্ভিসেস (২০১০ থেকে), ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম (বিভিন্ন সময়ে)।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চীন একঘরে হয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে, তারা নিজস্ব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে সেই শূন্যস্থানই শক্তিতে পরিণত করেছে। চীন কেবল প্রযুক্তির বিকল্প বানায়নি, বরং তা নিয়েই গড়েছে এক সুশৃঙ্খল প্রযুক্তি খাত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
🔹 Baidu — চীনের গুগল
অনুসন্ধান ইঞ্জিন থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পর্যন্ত সবখানে প্রভাবশালী ভূমিকা।
🔹 WeChat — একটি অ্যাপে পুরো জীবন
চ্যাটিং, ব্যাংকিং, পেমেন্ট, রাইড শেয়ারিং, সোশ্যাল মিডিয়া—সবকিছুই এই এক প্ল্যাটফর্মে।
🔹 Alibaba & Tencent — ই-কমার্স ও বিনোদনের সাম্রাজ্য
অ্যামাজনের বিকল্প হিসেবে আলিবাবা, আর গেমিং ও স্ট্রিমিংয়ে টেনসেন্ট বিশ্বে নেতৃস্থানীয়।
🔹 Douyin — চীনের টিকটক
টিকটকের অভ্যন্তরীণ সংস্করণ Douyin নিয়ন্ত্রিত কনটেন্ট দিয়ে গঠিত, চীনের নিয়ন্ত্রিত নীতিমালায় পরিচালিত।
আজ চীন কেবল নিজের জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বে প্রযুক্তি সরবরাহ করছে। কিছু উল্লেখযোগ্য দিক: Huawei এখন বিশ্বের ৫জি নেটওয়ার্ক নির্মাণে অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান।DJI নামে চীনা কোম্পানি বিশ্বের ৭০% বাণিজ্যিক ড্রোন বাজার দখলে রেখেছে। Facial recognition এবং AI surveillance-এ চীনের প্রযুক্তি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
তবে চীনের এই উত্থান নিয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ। অধিকাংশ পশ্চিমা বিশ্লেষকের মতে, এই উন্নয়ন ব্যক্তি স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার এবং তথ্যের উন্মুক্ততার বিপরীতে অবস্থান করছে। চীনের পাল্টা যুক্তি—“নিয়ন্ত্রিত তথ্যনীতিই টেকসই সমাজ ও প্রযুক্তি নিশ্চিত করে।”
একজন প্রযুক্তি বিশ্লেষকের ভাষায়— “চীন যা বিদেশে বন্ধ করে, তার উন্নত সংস্করণ ঘরে তৈরি করে। এটাই তাদের আসল কৌশল।”
কৌশলী নীরবতায় শীর্ষে চীন। AI, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট—সব প্রযুক্তিগত দৌড়ে চীন আজ পশ্চিমা বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। আর তা হচ্ছে ফেসবুক, গুগল বা ইউটিউব ছাড়াই। বিশ্ব যখন স্বাধীনতার নামে বিশৃঙ্খলায় জর্জরিত, তখন চীন কৌশল, নিয়ন্ত্রণ ও স্বনির্ভরতার মিশেলে গড়ে তুলেছে এক বিকল্প গ্লোবাল পাওয়ার হাব।
ফারুক