
ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাবের পর দ্বিপাক্ষিক শান্তি আলোচনায় 'ইতিবাচক' মনোভাবের কথা জানালেন রুশ প্রেসিডেন্ট
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনা করতে তিনি প্রস্তুত। সোমবার (২১ এপ্রিল) রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তব্যে পুতিন বলেন, তিনি “যে কোনো শান্তি উদ্যোগের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি” পোষণ করেন এবং আশাবাদী যে, “কিয়েভও একইভাবে ভাববে”।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পরপরই দু’দেশের মধ্যে কিছু আলোচনা হলেও এরপর আর কোনো দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি উভয়পক্ষকে একটি যুদ্ধবিরতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, ৩০ ঘণ্টার ইস্টার যুদ্ধবিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার পর পুতিনের এই মন্তব্য সরাসরি আলোচনায় আগ্রহের ইঙ্গিত দেয়। যদিও ওই যুদ্ধবিরতির সময় উভয়পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে।
রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স-কে পেসকভ বলেন, “প্রেসিডেন্ট যখন বলছেন, বেসামরিক স্থাপনায় হামলা না-করার বিষয়টি দ্বিপাক্ষিকভাবে আলোচনার বিষয় হতে পারে, তখন তিনি ইউক্রেনীয় পক্ষের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা বোঝাচ্ছিলেন।”
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও, রাতের নিয়মিত ভিডিও বার্তায় ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বেসামরিক জনগণের ওপর হামলা বন্ধে যুদ্ধবিরতি নিয়ে “যে কোনো আলোচনা” করতে ইউক্রেন প্রস্তুত।
এর আগে রবিবার (২০ এপ্রিল) জেলেনস্কি প্রস্তাব দেন, অন্তত ৩০ দিনের জন্য দীর্ঘপাল্লার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ রাখতে হবে, বিশেষ করে বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর।
পুতিন বলেন, রাশিয়া বিষয়টি “বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে।” তবে তিনি অভিযোগ করেন, ইউক্রেন রেস্তোরাঁ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসামরিক ভবনগুলোকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে— ফলে বাস্তবে যুদ্ধবিরতির প্রয়োগ কতটা সম্ভব, তা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
সোমবার আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে জেলেনস্কি বলেন, অন্ততপক্ষে বেসামরিক স্থাপনায় হামলা না-চালানোর প্রস্তাবটি এখনো বহাল রয়েছে এবং তিনি মস্কোর কাছ থেকে “পরিষ্কার জবাব” প্রত্যাশা করছেন।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে অগ্রগতি না-হলে তিনি আলোচনার প্রয়াস থেকে সরে আসবেন। তবে তিনি সোমবারও আশা প্রকাশ করেন যে, একটি চুক্তি খুব শিগগিরই হতে পারে— এমনকি এই সপ্তাহেই।
জেলেনস্কি জানান, যুদ্ধ অবসানে আলোচনা চালাতে আগামী বুধবার লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইউক্রেনের আলোচকরা বৈঠকে বসবেন। এই আলোচনা প্যারিসে অনুষ্ঠিত গত সপ্তাহের বৈঠকের ধারাবাহিকতা।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো ফ্রান্সইনফো রেডিওকে বলেন, ইউরোপ ওই বৈঠকে ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের সীমারেখা স্পষ্ট করেছে। তিনি আরও দাবি করেন, পুতিনের উদ্যোগে আয়োজিত ইস্টার যুদ্ধবিরতি ছিল মূলত ট্রাম্পের বাড়তে থাকা বিরক্তি প্রশমনের জন্য পরিকল্পিত এক “মার্কেটিং কৌশল”।
যখন শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে এবং ট্রাম্প মস্কোর একাধিক দাবি মেনে নিতে রাজি বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তখন রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের সামরিক অগ্রগতি আরও জোরদার করতে চাইছে। ইতোমধ্যে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে রাশিয়া আবারও রাতভর ৫৪টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে রুশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর দখলে থাকা শেষ কয়েকটি ঘাঁটির একটি, গর্নাল সেন্ট নিকোলাস বেলোগোর্স্কি মঠ পুনরুদ্ধার করেছে রুশ সেনারা।
শহীদ