ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি হওয়ার ১৫ সম্ভাব্য প্রার্থী

প্রকাশিত: ১১:৪০, ২২ এপ্রিল ২০২৫

পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি হওয়ার ১৫ সম্ভাব্য প্রার্থী

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু ক্যাথলিক চার্চের জন্য একটি গভীর শোকের মুহূর্ত, তবে এটি নতুন পোপ নির্বাচনের দৌড়ও শুরু করেছে।

ক্যাথলিক চার্চের ইতিহাসে পরবর্তী পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

পোপ ফ্রান্সিসের পরবর্তী নেতা নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীকে সামনে আনা হয়েছে।

নিচে সেই প্রার্থীদের কিছু বিশদ পরিচিতি দেওয়া হলো:

১. পিয়েত্রো প্যারোলিন (ইতালি), ৭০, ভ্যাটিকানের সেক্রেটারি অব স্টেট

পিয়েত্রো প্যারোলিন দীর্ঘ সময় ধরে ভ্যাটিকান সরকারের প্রধান হিসাবে কাজ করছেন, পোপ ফ্রান্সিসের সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং ভ্যাটিকানের কূটনৈতিক কার্যক্রমে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন।

২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাকে এই পদে নিযুক্ত করেন। প্যারোলিনকে কূটনীতি, প্রশাসন এবং বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে গভীর অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা তাকে পোপ হওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী প্রার্থী করে তুলেছে।

২. পিয়েরবাত্তিস্তা পিজাবাল্লা (ইতালি), ৬০, ল্যাটিন প্যাট্রিয়ার্ক অব জেরুজালেম

পিজাবাল্লা বর্তমানে জেরুজালেমের ল্যাটিন প্যাট্রিয়ার্ক, মধ্যপ্রাচ্যে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

তিনি পূর্ববর্তী পোপদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন এবং ২০২৩ সালে কার্ডিনাল হিসেবে নির্বাচিত হন।

তিনি ফিলিস্তিন, ইসরায়েল, জর্ডান এবং সাইপ্রাসে ক্যাথলিকদের জন্য কাজ করেছেন এবং বিশ্ব শান্তির পক্ষে শক্তিশালী সমর্থক।

তার প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের ক্যাথলিকদের মধ্যে গভীরভাবে অনুভূত।

৩. ম্যাটেও মারিয়া জুপ্পি (ইতালি), ৬৯, বোলোগনার আর্চবিশপ

বোলোগনার আর্চবিশপ ম্যাটেও মারিয়া জুপ্পি, যিনি ক্যাথলিক সমাজে একটি প্রগতিশীল কণ্ঠস্বর, বিশ্ব শান্তির জন্য পোপ ফ্রান্সিসের বিশেষ শান্তির দূত হিসেবে ইউক্রেনে নিযুক্ত হয়েছেন।

তিনি বিশেষত সেন্ট’ইজিডিও রোমান সম্প্রদায়ের সদস্য এবং অভিবাসী ও সমকামী ক্যাথলিকদের জন্য তার ভূমিকার জন্য সুপরিচিত।

তিনি গত কয়েক বছরে ইউরোপীয় শান্তি ও মানবাধিকার বিষয়ে তার দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।

৪. ক্লডিও গুগেরোত্তি (ইতালি), ৬৯

ভ্যাটিকানের আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং স্লাভিক বিশ্বের প্রতি গভীর নজর দেওয়া ক্লডিও গুগেরোত্তি ২০২২ সালে পূর্ব গির্জাগুলোর জন্য ডিকাস্টারির প্রধান নিযুক্ত হয়েছেন, ভ্যাটিকানের ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

তিনি রোমান কুরিয়া (ভ্যাটিকানের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা) এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন এবং তার পদ্ধতি প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক।

৫. জ্যঁ-মার্ক এভেলিন (ফ্রান্স), ৬৬, মার্সেইর আর্চবিশপ

জ্যঁ-মার্ক এভেলিন ২০২২ সালে কার্ডিনাল হিসেবে নিযুক্ত হন।

তিনি পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এভেলিন বিশেষত ধর্মীয় সংলাপ ও অভিবাসীদের সুরক্ষায় তার ভূমিকার জন্য পরিচিত।

তিনি একটি আধুনিক ক্যাথলিক গির্জার পক্ষে কাজ করছেন, যা সামাজিক পরিবর্তন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

৬. অ্যান্ডার্স আরবোরেলিয়াস (স্বিডেন), ৭৫, স্টকহোমের বিশপ

আরবোরেলিয়াস স্বিডেনের প্রথম কার্ডিনাল, তার কাজের মাধ্যমে ক্যাথলিক ধর্মকে আরও খোলামেলা এবং সহনশীল করেছেন।

তিনি পোপ ফ্রান্সিসের সাথে একযোগে কাজ করেছেন এবং বিশেষত গির্জার জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছেন।

তিনি বিশ্বে অভিবাসী সম্প্রদায় এবং সমকামী ক্যাথলিকদের সমর্থন জানানোর জন্য পরিচিত।

৭. মারিও গ্রেচ (মাল্টা), ৬৮, গোজো এর বিশপ ইমেরিটাস

মাল্টার বিশপ গ্রেচ সিনড অফ বিশপসের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন।

তিনি গির্জার ভেতর এবং বাইরের ইস্যুগুলোর ওপর এক গভীর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করেন। তিনি বিশেষত ক্যাথলিক যুবকদের জন্য তার কাজের জন্য পরিচিত।

৮. পিটার এর্দো (হাঙ্গেরি), ৭২, এসজারটম-বুদাপেস্টের আর্চবিশপ

এর্দো ক্যানন আইন এবং ধর্মীয় তত্ত্বে বিশেষজ্ঞ, তিনি পোপ ফ্রান্সিসের একজন ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা।

তিনি একটি আধুনিক গির্জার পক্ষে কাজ করছেন এবং সমকামীদের বিরুদ্ধে পোপের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেছেন।

৯. জ্যঁ-ক্লদ হোলেরিচ (লুক্সেমবার্গ), ৬৭, আর্চবিশপ

লুক্সেমবার্গের আর্চবিশপ হোলেরিচ পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, তিনি গির্জার সংস্কারে এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষত তিনি শাস্তি প্রদান ও ধর্মীয় সংলাপে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছেন।

১০. লুইস আন্তোনিও ট্যাগলে (ফিলিপিন্স), ৬৭, ম্যানিলার আর্চবিশপ ইমেরিটাস

ফিলিপিন্সের প্রাক্তন আর্চবিশপ ট্যাগলে পোপ ফ্রান্সিসের বিশেষ পরামর্শদাতা, লাতিন আমেরিকার ক্যাথলিকদের জন্য তার ভূমিকার জন্য পরিচিত। তিনি ধর্মীয় অসাম্প্রদায়িকতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

১১. চার্লস মাওং বো (মিয়ানমার), ৭৬, ইয়াঙ্গনের আর্চবিশপ

বো মিয়ানমারে প্রথম এবং একমাত্র কার্ডিনাল, তিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।

মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার বিষয়ে তিনি তার কঠোর বক্তব্য প্রকাশ করেছেন।

১২. পিটার তুর্কসন (ঘানা), ৭৬, কেপ কোস্টের আর্চবিশপ ইমেরিটাস

তুর্কসন আফ্রিকার প্রভাবশালী কার্ডিনালদের মধ্যে অন্যতম, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার, পরিবেশগত সমস্যা এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

তিনি জাতিসংঘে আফ্রিকান জনগণের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন।

১৩. ফ্রিদোলিন অ্যামবঙ্গো বেসুংগু (ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো), ৬৫, কিনশাসার আর্চবিশপ

অ্যামবঙ্গো কঙ্গোর প্রথম কার্ডিনাল, এক সাহসী নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি আফ্রিকান ক্যাথলিকদের জন্য একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যত তৈরির জন্য কাজ করছেন।

১৪. রবার্ট ফ্রান্সিস প্রিভস্ট (যুক্তরাষ্ট্র), ৬৯, চিত্লায়োর আর্চবিশপ-বিশপ ইমেরিটাস

প্রিভস্ট নতুন বিশপদের নিয়োগের ক্ষেত্রে পোপ ফ্রান্সিসের পরামর্শদাতা, লাতিন আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

তিনি দক্ষিণ আমেরিকার ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সংস্কারের পক্ষে।

১৫. টিমোথি ডোলান (যুক্তরাষ্ট্র), ৭৫, নিউ ইয়র্কের আর্চবিশপ

ডোলান নিউ ইয়র্কে ক্যাথলিক ধর্মের নেতৃত্ব দেন, একটি শক্তিশালী কট্টরপন্থী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত।

তিনি সমকামীদের বিরুদ্ধে ক্যাথলিক চার্চের অবস্থান সম্পর্কে কঠোর মন্তব্য করেছেন।

এই ১৫ জন প্রার্থী ভ্যাটিকানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন এবং পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।

সজিব

×