
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের বেঙ্গালুরুতে বসবাসকারী ও এনজিও 'U & I'–এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অজিত শিবরাম–এর একটি আবেগঘন লিংকডইন পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছে।
"ভারতে মেয়েকে মানুষ করা মানে এক প্রকার বিপ্লব, যা অভিভাবকত্বের ছদ্মবেশে চলে"—এই শিরোনামে পোস্টটিতে পিতৃত্বের আনন্দের পাশাপাশি নারীবাদী সমাজে কন্যাদের প্রতিদিনের সংগ্রামের চিত্র ফুটে উঠেছে।
পোস্টে অজিত লেখেন, "প্রতিদিন সকালে দেখি, আমার মেয়েরা ইউনিফর্ম পরে, স্বপ্ন গুছিয়ে এমন এক দুনিয়ায় পা রাখে, যা তাদের জন্য তৈরি হয়নি। একটা দুনিয়া, যেখানে তাদের আকাঙ্ক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, হাসি নিয়ন্ত্রণ করা হয়, আর নীরবতায় তাদের মূল্য মাপা হয়।"
এই দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি শিখেছেন নেতৃত্বের প্রকৃত পাঠ। যা কোনো এমবিএ কোর্স শেখাতে পারে না।
"ভারতে কন্যা সন্তান মানুষ করা মানে প্রতিদিন সকালে বৈষম্যের মুখোমুখি হওয়া। আত্মীয়দের প্রশ্ন—'ছেলে না হওয়ায় হতাশ হয়েছি কি না', প্রতিবেশীরা আমার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যালে নিয়ে কথা বলেন, আর আমার সঙ্গে বিজ্ঞান প্রকল্প নিয়ে। কেন নিরাপত্তা এখনো অধিকার নয়, বরং প্রাপ্তির বিষয়। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় প্রতিনিয়ত," লেখেন তিনি।
তিনি আরও লেখেন, "নেতৃত্ব কেবল বোর্ডরুমে শেখা যায় না। এটা শেখা যায় ডিনার টেবিলে, যখন বলতে হয়'মেয়েরা এটা করে না'এই কথাটি কুসংস্কারের মোড়কে মোড়ানো এক মিথ। যখন সাত বছরের মেয়ে জানতে চায় কেন চাচা বললেন মেয়েদের 'উপযুক্তভাবে' আচরণ করা উচিত? তখন তাকে ঘুম পাড়ানোর আগে আপনাকে শতাব্দী পিতৃতন্ত্র ভাঙতে হয়।"
"ক্লায়েন্ট অফিসে গেলে এখন দেখি, কোন নারীরা কথা বলার সময় বাধা পাচ্ছেন, কাদের আইডিয়াকে অন্যদের নামে চালানো হচ্ছে, কোন শ্রম অদৃশ্য থেকে যায় অথচ দল চালু রাখে। এসব আমি বুঝি, কারণ আমি এটা দেখি আমার দুই মেয়ের মধ্যেই।"
তিনি মনে করেন, কর্পোরেট ভারতে কেবল 'নারী নেতৃত্ব' কর্মসূচি চালু করলেই চলবে না, দরকার এমন পুরুষদের, যারা মেয়েদের চোখ দিয়ে এই দুনিয়াকে দেখেছেন।
"বৈচিত্র্য কোনো দান নয়, এটা কৌশলগত সুবিধা। নেতৃত্ব মানে কেবল কর্তৃত্ব নয়, বরং সহানুভূতি, মনোযোগ দিয়ে শোনা, এবং এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে সবাই তাদের সত্যিকারের সত্তা নিয়ে কাজ করতে পারে।"
তার সবচেয়ে শক্তিশালী উপলব্ধি, "প্রতিদিন রাতে যখন দুই মেয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘তুমি আজ আমাদের জন্য পৃথিবীটা একটু হলেও ভালো করেছো কি?’ তখন আমি জানি, সত্যিকারের নেতৃত্ব মানে যতটা ওপরে ওঠা যায় তা নয়, বরং কতোজনকে সঙ্গে করে ওঠা যায়, সেটাই আসল।"
সামাজিক মাধ্যমে পোস্টটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। একজন পাঠক মন্তব্যে লেখেন, "এটাই প্রকৃত নেতৃত্ব। ধন্যবাদ আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য।"
আরেকজন লেখেন, "অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী বার্তা। সব বাবা-মায়ের এটা জানা জরুরি!" এই পোস্ট অনুপ্রাণিত করেছে হাজারো মানুষকে। লিঙ্গ সমতা ও নেতৃত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছে অজিত শিবরামের কথাগুলো। যা মনে করিয়ে দেয়, ভবিষ্যতের জন্য লড়াই শুরু হয় নিজের ঘর থেকেই।
শহীদ