
ছবি: সংগৃহীত
রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপ ফ্রান্সিস ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় নিজ বাসভবনে ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি শ্বাসজনিত জটিলতা ও নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর বিশ্বজুড়ে ১৩০ কোটিরও বেশি ক্যাথলিক অনুসারীর চোখ এখন নতুন নেতৃত্বের দিকে। সামনে এসেছে প্রশ্ন পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি কে হবেন?
নতুন পোপ নির্বাচন প্রক্রিয়া
পোপের মৃত্যুর পর ‘প্যাপাল কনক্লেভ’ নামে পরিচিত প্রথাগত এক সভা বসে, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কার্ডিনালরা যোগ দেন। এ বছর ২৫২ কার্ডিনালের মধ্যে ১৩৮ জন ভোট দেওয়ার উপযোগী বয়সে রয়েছেন এবং তারা সিস্টিন চ্যাপেলে গোপন ভোটে নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য একত্র হবেন।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিদিন চারবার পর্যন্ত ভোটাভুটি হয় এবং নতুন পোপ নির্বাচিত হতে হলে প্রার্থীর দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে হয়। ভোটের ফলাফল জানাতে ঐতিহ্যগতভাবে সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়া—কালো মানে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, আর সাদা মানে নতুন পোপ নির্বাচিত,বিশ্ববাসীকে জানান দেয়।
এখনো পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি স্পষ্টভাবে এগিয়ে নেই, তবে বেশ কয়েকজন আলোচিত কার্ডিনালের নাম সামনে এসেছে, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন:
সম্ভাব্য প্রার্থী
কার্ডিনাল পিয়েত্রো পারোলিন (৭০, ইতালি): তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ভ্যাটিকানের কূটনৈতিক সেবায় থাকা পারোলিন ইতালি, নাইজেরিয়া, মেক্সিকো ও ভেনেজুয়েলায় কাজ করেছেন। মধ্যপন্থী এই কার্ডিনাল পোপ ফ্রান্সিসের নীতিগুলো এগিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী। তাঁর মতে, “শান্তির জন্য সমাধান কখনো একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়, তাতে গোটা জনগোষ্ঠীর অধিকার লঙ্ঘিত হয়।”
কার্ডিনাল ফ্রিডোলিন আমবঙ্গো বেসুংগু (৬৫, কঙ্গো ডিআর): আফ্রিকা ও মাদাগাসকারের ক্যাথলিক সম্মেলনের সভাপতি তিনি। চার্চের রক্ষণশীল নীতির পক্ষে জোরালো অবস্থান রয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, “সিনোডালিটি হচ্ছে নতুনভাবে চার্চ হয়ে ওঠার ভাবনা—আরো শুনে, একসঙ্গে পথচলার প্রয়াস।”
কার্ডিনাল উইলেম ‘উইম’ আইক (৭১, নেদারল্যান্ডস): একজন চিকিৎসক থেকে ধর্মযাজক হওয়া এই কার্ডিনাল কঠোর রক্ষণশীল মতাদর্শে বিশ্বাসী। বিশেষ করে বিবাহবিচার ও পুনর্বিবাহ সংক্রান্ত নীতিতে তিনি আগের কঠোরতাই ফিরিয়ে আনতে চান। তাঁর কথায়, “শুধু বিশ্বাসীদের নয়, প্রত্যেকেরই সত্য জানার অধিকার আছে।”
কার্ডিনাল পিটার এরডো (৭২, হাঙ্গেরি): হাঙ্গেরির আর্চবিশপ এরডো কঠোরভাবে চার্চের রীতিনীতি মেনে চলার পক্ষে। তিনি বিবাহবিচারপ্রাপ্ত ও পুনর্বিবাহিত ব্যক্তিদের পবিত্র কমিউনিয়নে অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেন। তাঁর ভাষায়, “বিশ্বাসই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
কার্ডিনাল লুইস আন্তোনিও তাগলে (৬৭, ফিলিপাইন): “এশীয় ফ্রান্সিস” নামে পরিচিত এই কার্ডিনাল প্রগতিশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী। সমাজের প্রান্তিক মানুষদের পাশে দাঁড়ানোকে চার্চের দায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি। তাঁর বাণী: “ক্ষমা হলো এমন এক অনুভব, যা প্রত্যেককে বোঝায়—কেউই হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি।”
কার্ডিনাল রেমন্ড বার্ক (৭৬, যুক্তরাষ্ট্র): পোপ ফ্রান্সিসের উদারনীতির কড়া সমালোচক বার্ক একটি রক্ষণশীল ক্যাথলিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার পক্ষপাতী। তাঁর মতে, “আমাদের সামাজিক দায়িত্ব হলো নৈতিক আইন অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা।”
কার্ডিনাল রবার্ট সারা (৭৮, গিনি): ল্যাটিন ভাষার প্রথাগত গির্জা সেবার পক্ষে তিনি দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছেন। পোপ ফ্রান্সিসের ধর্মীয় সংস্কারের সমালোচক তিনি বলেন, “প্রার্থনা মানে হলো, নিঃশব্দে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শোনা।”
কার্ডিনাল মাত্তেও জুপ্পি (৬৯, ইতালি): সমাজকল্যাণ ও অন্তর্ভুক্তির ওপর জোর দিয়ে চলা এই কার্ডিনাল মধ্যপন্থী হিসেবে বিবেচিত। তিনি বলেন, “আমরা কি আসলেই মুক্ত? না কি টাকা, ক্ষমতা আর সাফল্যের মিথ্যে মোহে বন্দী?”
কার্ডিনাল পিটার টার্কসন (৭৬, ঘানা): সামাজিক ন্যায়বিচার ও পরিবেশ বিষয়ক নানা উদ্যোগে জড়িত থাকা এই কার্ডিনাল মাঝারি পথের প্রবক্তা। তাঁর মতে, “শান্তি ন্যায়বিচারের ফল। ঈশ্বরের কোনো সন্তানই বাইরে পড়ে থাকবেন না।”
কার্ডিনাল মার্ক ওয়েলেট (৮০, কানাডা): বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ধর্মতত্ত্বে পারদর্শী এই কার্ডিনাল ভ্যাটিকানের শীর্ষ প্রশাসনিক পদে কাজ করেছেন। রক্ষণশীল ও মধ্যপন্থী উভয় দলের কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেন তিনি। তাঁর কথা: “ভয় মানেই ঈশ্বরে বিশ্বাসের অভাব। ঈশ্বরকে জানা যায় প্রেম দিয়ে, গবেষণা দিয়ে নয়।”
শহীদ