
ছবি: সংগৃহীত
এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের অর্ধবার্ষিক সভায় অংশ নিতে শত শত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারক জড়ো হচ্ছেন। সভার মূল আলোচ্য বিষয়, ট্যারিফ বা আমদানি শুল্ক, বিশেষত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কনীতি।
সাধারণত এই বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন, মুদ্রাস্ফীতি, কিংবা ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অর্থ সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে এ বছর সব আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে ট্রাম্পের ট্যারিফনীতি, বিশ্ব অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব এবং এর মোকাবিলার কৌশল।
সবচেয়ে বেশি নজর থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টের ওপর, যিনি ট্রাম্পের ট্যারিফনীতির মূল প্রবক্তা এবং যাঁর প্রতি আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সমর্থন এখনো অনিশ্চিত।
“এই সপ্তাহ জুড়ে বাণিজ্যযুদ্ধ এবং প্রায় প্রতিটি দেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনাই প্রাধান্য পাবে,” বলেছেন আটলান্টিক কাউন্সিলের জিও-ইকোনমিকস সেন্টারের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জশ লিপস্কি। “ফলে এবারের বসন্তকালীন সভা হয়ে উঠছে একেবারে ব্যতিক্রমধর্মী—একটি মাত্র ইস্যুর দখলে।”
'স্পষ্টভাবে নিম্নমুখী পূর্বাভাস' : ট্যারিফ অনিশ্চয়তা ও বাজার অস্থিরতার প্রেক্ষিতে আইএমএফের সর্বশেষ অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পূর্বাভাসটি মঙ্গলবার প্রকাশিত হবে, যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণচাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আইএমএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, "মন্দা নয়, তবে স্পষ্টভাবে নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি" দেখা যাবে। তিনি সতর্ক করেন যে, "বাণিজ্য অস্থিরতা ঘিরে নেতিবাচক ধারণা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে স্তব্ধ করে দিতে পারে।"
ট্রাম্পের শুল্কনীতির ফলে মার্কিন সরকারি বন্ড বিক্রিতে চাপ পড়েছে, ফলে ডলার ‘নিরাপদ আশ্রয় সম্পদ’ হিসেবে কতটা নির্ভরযোগ্য থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ট্রেজারি সেক্রেটারি বেসেন্টের ভূমিকা: বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ সভার পাশাপাশি জি-২০ অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অতীতে এই সভাগুলো মহামারি বা আর্থিক সংকটে আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের প্ল্যাটফর্ম ছিল। কিন্তু এবার প্রত্যেক দেশ নিজেদের স্বার্থেই চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ট্রেজারি কর্মকর্তা ন্যান্সি লি বলেন, “বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকের সংস্কার এবার পেছনে পড়ে যাবে। এবার সবকিছু ঘুরপাক খাবে ট্রাম্পের ট্যারিফকে ঘিরে।”
বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্রুত চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী। জাপানের অর্থমন্ত্রী কাটসুনোবু কাতো ও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থমন্ত্রী চোই সাং-মক এরই মধ্যে বেসেন্টের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—ট্রাম্প প্রশাসন আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে কিনা। ‘প্রজেক্ট ২০২৫’ এ যুক্তরাষ্ট্রের এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ রয়েছে।
ন্যান্সি লি বলেন, “বেসেন্টের প্রধান কাজ—এই সভায় মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—যুক্তরাষ্ট্র কি এই বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে নিজের স্বার্থে অপরিহার্য মনে করে?”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ও চীনের প্রভাব মোকাবিলা: বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তার গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। তবে বাইডেন প্রশাসনের প্রতিশ্রুত ৪ বিলিয়ন ডলার অনুদান ট্রাম্প দেবেন কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত।
বিশ্বব্যাংক এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পারমাণবিক ও গ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ, এবং জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্পে জোর দিচ্ছে—যা ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকারের সঙ্গে মিল রয়েছে।
বেসেন্ট আইএমএফের ২০ বিলিয়ন ডলারের আর্জেন্টিনা ঋণ কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছেন, এবং গত সপ্তাহে বুয়েনোস আইরেস সফরে গিয়ে বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র চায় চীনের লোভনীয় ঋণ চুক্তির বিকল্প তৈরি হোক।"
তিনজন প্রাক্তন মার্কিন ট্রেজারি কর্মকর্তা দ্য হিল পত্রিকায় লিখেছেন, “আইএমএফ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘অসাধারণ একটি অর্থনৈতিক চুক্তি’। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব অনেক, খরচ খুবই কম।”
তারা আরও বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়ে, চীন জয়ী হবে। আমাদের প্রভাব আমাদের আমেরিকান অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে সাহায্য করে।”
শহীদ