
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিন—একটা নাম নয়, এক আত্মার চেতনাস্বরূপ। একখণ্ড ভূখণ্ড, যেখানে প্রতিদিন ইতিহাস লেখা হচ্ছে রক্তে, অশ্রুতে, আর ঈমানের গভীরতায়। আর এই ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনের মায়েদের একটি উক্তি —"তুমি শহীদ হও, বাইতুল মুকাদ্দাস যেন বেঁচে থাকে।"
এই বাক্যটি আজ কেবল একটি কথামাত্র নয়। এটি এক জননীর হৃদয় থেকে উচ্চারিত সেই চূড়ান্ত ত্যাগের প্রতীক, যা কোনো রাষ্ট্রনেতার বক্তৃতায় বা যুদ্ধে লিপ্ত যোদ্ধার কণ্ঠে নয়, বরং ঘরের কোণে বসে থাকা এক মায়ের অশ্রুহীন চোখে প্রতিধ্বনিত হয়।
যেখানে বিশ্বজুড়ে মায়েরা সন্তান হারানোর ভয় নিয়ে দিন কাটান, ফিলিস্তিনের মা সেখানে সন্তানের শহীদ হওয়ার প্রার্থনা করেন। তাঁদের কাছে জীবন নয়, বরং আল-আকসা মসজিদের সম্মান বড়। সন্তান শহীদ হলে তাঁরা বলেন— "আমার বুক খালি হয়েছে, কিন্তু বাইতুল মুকাদ্দাসের মান রক্ষা পেয়েছে।"
এই লড়াই শুধুই ভূখণ্ড রক্ষার নয়। এটি ঈমান রক্ষার সংগ্রাম। ফিলিস্তিনের তরুণেরা যখন বিদায় নেয় যুদ্ধের ময়দানে, তখন তাঁদের হৃদয়ে থাকে এই বার্তা—মৃত্যু নয়, শহীদ হওয়াই আমাদের লক্ষ্য। এই বিশ্বাস তাদের সাহস দেয়, আর আল্লাহর সন্তুষ্টি তাদের একমাত্র চাওয়া হয়ে দাঁড়ায়।
মায়ের মুখে উচ্চারিত এই বাক্য—"তুমি শহীদ হও, বাইতুল মুকাদ্দাস যেন বেঁচে থাকে"—আজ জাতীয় প্রতিজ্ঞায় রূপ নিয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতিটি গৃহে এই বাক্যের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। এটি এক জাতিকে একত্র করে, যা অস্ত্র নয়, বরং বিশ্বাসের শক্তিতে রচিত।
গাজা শহরের এক শহীদ যুবকের মা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমি কাঁদিনি, কারণ আমার সন্তান জান্নাতের পথ ধরেছে। আমি তাকে বলেছি, ‘আমার দোয়া তোমার সঙ্গে—তুমি শহীদ হও, বাইতুল মুকাদ্দাস যেন বেঁচে থাকে।’”
শহীদের কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের মুখে নেই কান্না, নেই হতাশা—আছে দৃঢ়তা আর গর্ব। যেন পুরো জাতির শক্তি তার চোখে জমে উঠেছে। এই বাক্য শুধু মায়ের প্রার্থনা নয়, এটি একটি জাতির আত্মিক অস্ত্র—যা ফিলিস্তিনকে বাঁচিয়ে রাখে প্রতিটি হামলার মাঝেও, প্রতিটি বুলেটের বিপরীতে। বিশ্ব যখন ন্যায়বিচারের সংজ্ঞা খুঁজে ফিরছে, ফিলিস্তিনের মায়েরা ত্যাগ, ঈমান, এবং জাতীয় চেতনার নতুন সংজ্ঞা দিয়ে চলেছেন—নীরব অথচ গম্ভীর কণ্ঠে। "তুমি শহীদ হও, বাইতুল মুকাদ্দাস যেন বেঁচে থাকে।"
ফারুক