
ছবি: সংগৃহীত
গাজার ধ্বংসস্তূপে মানুষের টিকে থাকার লড়াইয়ে সঙ্গী হয়েছেন গাজার একটি ছোট ক্লিনিকের চিকিৎসক ড. উইসাম সুক্কার। এটি জেনো তার কাছে একটি দুঃস্বপ্ন। যার কোনো শেষ নেই। গাজা শহরের ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন ৫০ মিনিট হেঁটে ক্লিনিকে পৌঁছান এই চিকিৎসকে। পরনে গোলাপি হিজাব ও সাদা অ্যাপ্রোন। চিকিৎসা করার আশায় তিনি পৌঁছান এমএসএফ পরিচালিত একটি ক্ষুদ্র ক্লিনিকে।
ফিলিস্তিনে ইজরায়েলের চলমান হত্যাযজ্ঞে ১৮ মাসে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানায়, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ২১টি আংশিক কার্যকর রয়েছে। ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং জ্বালানির অভাবে চিকিৎসকরা সীমাহীন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
সেখানে চলছে চিকিৎসকদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম
ড. সুক্কারের আগের কর্মস্থল ছিল একটি বার্ন ইউনিট, যা যুদ্ধের শুরুর দিকে ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা গাজা শহরের পশ্চিমে একটি অফিস ঘরকে ক্লিনিকে রূপান্তর করেছেন। প্রতিদিন সকাল ৯:৩০ নাগাদ তিনি ক্লিনিকের কাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে টেন্টে অপেক্ষমাণ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৫০ জন।
“আমাদের অধিকাংশ রোগী বাস্তুচ্যুত মানুষ,” বলেন ড. সুক্কার। “তারা আশ্রয় শিবিরে, এমনকি রাস্তায় তাঁবুতেও বসবাস করছে।”
স্বাস্থ্যসেবার অভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে শিশুদের মাঝে। সর্দি, ডায়রিয়া, স্ক্যাবিস এবং মশার কামড়—সব মিলিয়ে শিশুদের অসুস্থতা বেড়েছে কয়েকগুণ। রান্নার গ্যাস না থাকায় খোলা আগুনে রান্না করতে গিয়ে দগ্ধও হচ্ছেন অনেকে।
রেফার করার কোনো ব্যবস্থা নেই
ড. সুক্কার বলেন, “প্রতিদিন আমরা আরও বেশি জটিল রোগী পাচ্ছি, কিন্তু তাদের রেফার করার মতো আর কোনো হাসপাতালই কার্যকর নেই।”
সম্প্রতি ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়েছে আল-আহলি আরব হাসপাতাল, যা ছিল উত্তর গাজার অন্যতম প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র। সেখানে জরুরি বিভাগ, ল্যাব, এক্স-রে মেশিন এবং ফার্মেসি ধ্বংস হয়ে গেছে।
ভেঙে পড়া ওষুধ সরবরাহ
ড. সুক্কার ক্লিনিকের ছোট্ট ফার্মেসিতে ঔষধ যান, তখন অনেক তাকই ফাঁকা। মার্চের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজার সব প্রবেশদ্বার বন্ধ রেখেছে, ফলে কোনো মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে পারেনি।
“ডায়াবেটিসের জন্য ইনসুলিন নেই, এপিলেপসির ওষুধ নেই, এমনকি জ্বর কমানোর ওষুধও নেই,” জানান তিনি। “চর্মরোগ, স্ক্যাবিস, উকুন – কোন কিছুরই ওষুধ নেই।”
অবশিষ্ট কিছু সরঞ্জাম খুব সাবধানে ব্যবহার করছেন চিকিৎসকেরা।
প্রতিদিনের সংগ্রামে ক্লান্ত
বিকাল ৩:৩০ নাগাদ ক্লিনিকের কাজ শেষ হয়। চারজন চিকিৎসক মিলে প্রায় ৩৯০ জন রোগী দেখেন। এরপর শুরু হয় ক্লান্তিকর হাঁটা পথ — বাড়ি ফেরার লড়াই।
ড. সুক্কারের পরিবার গত দেড় বছরে নয়বার বাসস্থান বদলেছে। আমার সন্তানদের জন্য পরিষ্কার পানি আর খাবার জোগাড় করাই এখন সবচেয়ে বড় যুদ্ধ।" বলেন তিনি। "বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল চার্জ করাও কষ্টকর। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো—আশা ধরে রাখা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
গাজায় এই আগ্রাসন কবে শেষ হবে?" — প্রশ্ন তাঁর, যার উত্তর আজও অজানা। ততদিন পর্যন্ত, এই দুঃস্বপ্নই তাঁর বাস্তবতা।
সূত্র: বিবিসি
রবিউল হাসান