ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

খাদ্যনালীতে ক্যান্সার, তবু চিকিৎসা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিশ্বের ‘দরিদ্রতম রাষ্ট্রপতি’র

প্রকাশিত: ০৮:৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৮:৩২, ২০ এপ্রিল ২০২৫

খাদ্যনালীতে ক্যান্সার, তবু চিকিৎসা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিশ্বের ‘দরিদ্রতম রাষ্ট্রপতি’র

ছবি: সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্রপ্রধান কথাটা শুনলেই প্রথমে মাথায় কী আসে? বিলাসবহুল জীবন, অর্থ-যশ কিংবা ধরাছোঁয়ার বাইরের একজন মানুষ। তবে এখন যাঁর কথা বলব, সেই মানুষটা এসব চিন্তাধারার বাইরের এক মানুষ। নাম হোসে আলবার্তো মুহিকা, ছিলেন উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট।

প্রেসিডেন্ট হবার পরেও খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন তিনি। সাধারণ মানে একেবারেই সাধারণ। এমনকি তাঁকে বলা হতো বিশ্বের সবচেয়ে গরীব প্রেসিডেন্ট। তবে তাঁর জীবনের পথ চলা সাধারণ ছিল না। ডাকাতি করা, দেশ স্বাধীনে কাজ করা, জেল খাটার মত নানা অভিজ্ঞতা আছে তাঁর ঝুলিতে।

নির্বাচনী প্রচারণায় যেমন দেখা যায় প্রতিযোগীরা বিলাসী বিজ্ঞাপন, বিলবোর্ড বা প্রচুর অনুষ্ঠান আয়োজন আর লাখ লাখ টাকা খরচ করেন, সেখানে তিনি ছিলেন একেবারেই উল্টো। উরুগুয়ের ৪০তম রাষ্ট্রপতি হবার দৌড়ে তিনি প্রচারণায় খরচ করেছিলেন খুব অল্প পরিমাণ টাকা।

তখন না হয় প্রচারণার টাকা ছিল না, প্রেসিডেন্ট হবার পর তো অনেক টাকা হবার কথা। কিন্তু সেখানেও তেমন মিল পাওয়া গেল না অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে। মুজিকার মাসিক বেতন ছিল প্রায় ১২ হাজার ডলার। সেখান থেকে তিনি দান করে দিতেন ৯০ শতাংশ, নিজের জন্য রাখতেন মাত্র ৭৭৫ ডলার, যা ছিল গরীব মানুষের মাসিক আয় থেকে কিছুটা বেশি।

সরকারের পক্ষ থেকে বিশাল প্রাসাদ দেওয়া হলেও তিনি সেটাও নেননি। হোসে মুহিকা বাস করতেন তাঁর স্ত্রীর পুরনো খামার বাড়িতে। বাড়ির পাহারাদার বলতে ছিলেন কেবল দুজন পুলিশ ও একটি তিন পাওয়ালা কুকুর।

প্রেসিডেন্ট হওয়া সত্ত্বেও খামারে স্ত্রীর সঙ্গে কৃষি কাজ করতেন তিনি। তাঁর এই বাড়িটি একটি পাহাড়ি কৃষি জনপদে। সেখানে তিনি ও তাঁর স্ত্রী মিলে ফুলের চাষ করেন। পরিবার চলে তাঁর স্ত্রীর আয় থেকে।

গরীব জীবন কাটালেও কোনো ঋণ রাখেননি তিনি, এমনকি তাঁর কোনো ব্যাংক একাউন্টও ছিল না। নিজেকে পরিচয় দিতেন কৃষক হিসেবে। ২০১০ সালে প্রেসিডেন্ট হোসে মুহিকা তাঁর সম্পদের পরিমাণ দেখান ১ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার, যা কিনা তার ১৯৮৭ মডেলের ভক্সওয়াগেন বিটল গাড়িটির দাম।

মুহিকার জীবনের পথ চলা এতটাও সহজ ছিল না। তিনি তাঁর বাবাকে হারিয়েছিলেন মাত্র ৮ বছর বয়সে। সংসারে নেমে এসেছিল চরম দারিদ্র্য। সংসার চালাতে কাজ শুরু করেছিলেন স্থানীয় বেকারিতে, সঙ্গে করতেন ফুল বিক্রি। এরপর কিউবান বিপ্লবের প্রতি সাড়া দিয়ে ১৯৬০ সালে সরকারের বিরুদ্ধে টোপামারস গেরিলা মুভমেন্টে যোগ দেন। সে সময় তিনি অপহরণ এবং হত্যা পর্যন্ত করেছিলেন এবং রবিনহুডের মতো ধনীদের কাছ থেকে চুরি করে, কখনো কখনো ব্যাংক বা স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ডাকাতি করে গরীবদের বিলিয়ে দিতেন।

তাঁকে জেলেও কাটাতে হয়েছে দীর্ঘদিন। এমনকি জেল থেকে পালানোর অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর। এরপর উরুগুয়েতে গণতন্ত্র ফিরে আসলে সাধারণ ক্ষমতা চুক্তির অধীনে মুহিকাকে মুক্তি দেওয়া হয় জেল থেকে। মুক্তি পেয়ে তিনি এবং তাঁর কিছু সাবেক গেরিলারা সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁরা প্রকৃত রাজনীতি করবেন। ২০০৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।

উরুগুয়েতে মুহিকাকে সবাই মেনে নিয়েছিল বিষয়টা এমন নয়। মুহিকা বিদ্বেষীদের পরিমাণও কম ছিল না। কিন্তু পাঁচ বছর পর তিনি যখন তার ক্ষমতা ছাড়েন, তখন বলা হয়েছিল পৃথিবীর সবচাইতে বিনীত মানুষটি আজ পদত্যাগ করলেন।

চলতি বছর মুহিকা জানান, তাঁর খাদ্যনালীতে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি আর চিকিৎসা গ্রহণ করবেন না। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি মারা যাচ্ছি। আমি শুধু চাই, আমাকে একা থাকতে দিন। আর কোনো সাক্ষাৎকার বা কিছু চাই না, আমার সময় শেষ।’

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=k1NWv--DxCA

রাকিব

×