ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

পুতিনের ইস্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা, সন্দেহে কিয়েভ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০১:৩২, ২০ এপ্রিল ২০২৫

পুতিনের ইস্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা, সন্দেহে কিয়েভ

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে সংক্ষিপ্ত এক ইস্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। তবে কিয়েভ এই ঘোষণাকে গভীর সন্দেহের চোখে দেখছে। এমন এক সময় এই ঘোষণা এল, যখন যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন শান্তি আলোচনাও স্থবির হয়ে পড়েছে।

পুতিন জানান, শনিবার মস্কো সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ৯টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৩টা) “সব যুদ্ধতৎপরতা” বন্ধ থাকবে।

“আমরা আশা করি, ইউক্রেনও আমাদের অনুসরণ করবে,” বলেন পুতিন। তাঁর দাবি, এই যুদ্ধবিরতি রাশিয়াকে বুঝতে সাহায্য করবে যে কিয়েভ প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধবিরতিতে কতটা আগ্রহী।

কিয়েভ এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করলেও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তারা পুতিনের ওপর আস্থা রাখেন না। তারা মনে করিয়ে দেন, ইউক্রেন একটি পূর্ণাঙ্গ ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও রাশিয়া এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সেই প্রস্তাবে সই করেনি।

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে, পুতিনের কথার সঙ্গে তার কাজের মিল নেই… রাশিয়া ইচ্ছা করলেই এখনই পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে পারে, যা মার্চ মাস থেকেই আলোচনার টেবিলে রয়েছে,” বলেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে।

পুতিনের ঘোষণার সময় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, এর ঠিক একদিন আগে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, রাশিয়া ও ইউক্রেন নিয়ে তাদের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে। একই দিন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ইউক্রেনীয় বাহিনীকে কুর্স্ক অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে হটিয়ে দিয়েছে, যেখানে গত বছর ইউক্রেন হামলা চালিয়েছিল।

পুতিনের ঘোষণার পরপরই কিয়েভ ও অন্যান্য অঞ্চলে বিমান হামলার সাইরেন বাজতে শুরু করে। কিয়েভের সামরিক প্রশাসন রাশিয়ার ড্রোন হামলার বিষয়ে সতর্ক করে এবং নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে অনুরোধ জানায়।

ইউক্রেনীয় সরকার পরিচালিত ডিসইনফরমেশন মোকাবিলা কেন্দ্রের প্রধান আন্দ্রিই কভালেঙ্কো জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকেও রুশ বাহিনী সর্বদিক থেকে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। মস্কো ও কিয়েভ একই সময় অঞ্চলভুক্ত হওয়ায় যুদ্ধবিরতির সময়কাল ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সিএনএন-কে ফ্রন্টলাইনের তিনটি আলাদা স্থান থেকে ইউক্রেনীয় সেনারা নিশ্চিত করেন, রাত ৮টা পর্যন্ত যুদ্ধের কোনো শিথিলতা দেখা যায়নি। পুতিনের ঘোষণার পরপরই এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, “মানবজীবন নিয়ে আরেকটি খেলায় মেতেছেন পুতিন।”

তিনি লেখেন, “এই মুহূর্তে সারা ইউক্রেনে বিমান হামলার সতর্কতা জারি হচ্ছে। বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে আমাদের আকাশে রুশ ড্রোন শনাক্ত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “শাহেদ ড্রোনগুলো পুতিনের ঈস্টার ও মানবজীবন সম্পর্কে সত্যিকারের মনোভাব প্রকাশ করছে।”

তবে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি গ্রহণ করবে কি না, সে বিষয়ে জেলেনস্কির পোস্টে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলা হয়নি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত যুদ্ধ কখনও পুরোপুরি থেমে থাকেনি।

পুতিনের হঠাৎ করা এই ঘোষণার অতি স্বল্প সময়সীমা কিয়েভের প্রস্তুতির সুযোগও প্রায় কেড়ে নিয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে রাতেই সাধারণত হামলা ও গোয়েন্দা অভিযান চালানো হয়, ফলে অনেক ইউক্রেনীয় সেনা এরই মধ্যে অবস্থানে ছিলেন।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ার প্রস্তাবিত একদিনের যুদ্ধবিরতিও ইউক্রেন প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন কিয়েভের দাবি ছিল—রাশিয়া যুদ্ধবিরতির আড়ালে সেনা পুনর্বিন্যাস করতে চায়। সেবারও যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছিল এক ধর্মীয় উৎসব—অর্থোডক্স বড়দিনকে ঘিরে।


পুতিনের এই ঘোষণাটি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন যুদ্ধের গতি নির্ধারণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংঘর্ষ ঘটছে। কুর্স্ক ছাড়াও পূর্ব ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ চলছেই, যদিও গত তিন বছর ধরে সেখানে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার’ জানিয়েছে, ইউক্রেন সম্প্রতি তোরেৎস্ক এলাকার কিছু অংশ থেকে রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে, তবে রাশিয়া ধীরে ধীরে কুপিয়ানস্ক, লিমান এবং কুরাখোভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শনিবারই উভয় পক্ষ যুদ্ধের অন্যতম বড় বন্দি বিনিময়ও সম্পন্ন করেছে।

জেলেনস্কির তথ্য অনুযায়ী, ২৭৭ জন ইউক্রেনীয় বন্দি নিজ দেশে ফিরে এসেছেন। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪৬ ইউক্রেনীয় বন্দির বিনিময়ে তারা সমসংখ্যক রুশ বন্দিকে ফিরিয়ে এনেছে। এছাড়া “সদিচ্ছার নিদর্শন” হিসেবে ৩১ আহত ইউক্রেনীয় সৈন্যের বিনিময়ে ১৫ জন আহত রুশ সৈন্যকে মুক্তি দিয়েছে রাশিয়া। এই বন্দি বিনিময়ও আগের মতই সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় হয়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চলা শান্তি উদ্যোগ থমকে গেছে। রাশিয়া এখনও ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে চলেছে। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি না হলে কয়েক দিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ‘অন্য পথ খুঁজবে’।

শহীদ

×