ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

থার্ড টেম্পল নির্মাণ করতে চায় ইসরাইল

আল-আকসা মসজিদ ভাঙার পরিকল্পনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:১৪, ২০ এপ্রিল ২০২৫

আল-আকসা মসজিদ ভাঙার পরিকল্পনা

মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ

মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ ভেঙে সেখানে থার্ড টেম্পল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে দখলদার ইসরাইলের অবৈধ বসতিস্থাপনকারীরা। হিব্রু ভাষার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এ নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে তারা। এরই প্রেক্ষিতে সতর্কতা জারি করেছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয়। শনিবার এ ব্যাপারে সতর্কতা দিয়ে ফিলিস্তিনি মন্ত্রণালয় এক্সে একটি পোস্ট করেছে। এতে তারা জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। খবর আলজাজিরার।
তারা বলেছে, আল-আকসা মসজিদ ভাঙার পরিকল্পনাকে আমরা দখলকৃত জেরুজালেমে ইসলামিক এবং খ্রিস্টানদের পবিত্র স্থানে পদ্ধতিগত উস্কানি হিসেবে বিবেচনা করি। তারা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং এ বিষয় সংক্রান্ত জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে এই উস্কানিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব নিয়ে দেখা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। ইসরাইলি অবৈধ বসতিস্থাপনকারীরা প্রায়ই মুসলিমদের পবিত্র এ স্থানে গিয়ে তা-ব চালায়। নিষেধ থাকা সত্ত্বেও তারা সেখানে ধর্মীয় প্রার্থনা করে।

এতে তাদের সরাসরি সহায়তা করে দখলদার ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এসব অবৈধ বসতিস্থাপনকারী ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিগত ভূমিতে জোরপূর্বক বাস করে। তারা দখলদার ইসরাইলি সরকার থেকে সব ধরনের সুরক্ষা পেয়ে থাকে। জেরুজালেম স্ট্যাটাস কু (স্থিতিবস্থা) অনুযায়ী, আল-আকসা প্রাঙ্গণে অমুসলিমরা প্রার্থনা করতে পারবে না। তবে সাম্প্রতিক সেখানে ইহুদিরা যাওয়া শুরু করেছে।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের বিমান বাহিনীর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৪ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আহত হয়েছেন আরও বহুসংখ্যক। হামলায় বসতবাড়ি, তাঁবুর শিবির এবং একটি সেলুন ধ্বংস হয়েছে। গাজার পূর্বাঞ্চলের তুফাহ্ এলাকায় বোমা বর্ষণের ফলে আকাশে ধোঁয়ার কু-লী উঠতে দেখা যায়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজায় এখনই খাদ্য প্রয়োজন। কারণ সেখানে শত সহস্র মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

ইসরাইলি অবরোধের কারণে খাদ্য সহায়তা প্রবেশ করতে পারছে না। আলজাজিরার গাজা প্রতিনিধি জানান, টানা হামলা আর খাদ্য সংকটে মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১৮ মাস ধরে চলা ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখের বেশি আহত হয়েছেন। তবে গাজা সরকারের গণমাধ্যম অফিস বলছে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।

বর্তমানে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহর কাছে শাবৌর এবং তেল আস সুলতান এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সূত্রের বরাতে জানা গেছে, এই দুই ঘাঁটি থেকেই পরিচালনা করা হয়েছে সর্বশেষ এই হামলা। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ ফের জানিয়েছেন, ইসরাইল তার যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বদ্ধপরিকর। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তি এবং হামাসকে পরাজিত করা ইসরাইলের সেনাবাহিনী এখন চূড়ান্ত বিজয়ের পথে এগোচ্ছে। শুক্রবার ছিল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র দিন গুড ফ্রাইডে।

ইসরাইলের ব্যাপক হামলার মধ্যেই স্থানীয় গির্জাগুলোতে অনাড়ম্বরহীনভাবে ধর্মীয় আচার-আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছেন গাজার খ্রিস্টানরা। গাজার স্থানীয় একটি চার্চ থেকে ইহাব আয়াদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, বিগত বছরগুলোতে গুড ফ্রাইডের দিন আমরা সবাই পরিবার-পরিজনসহ গির্জায় আসতাম। সবার সঙ্গে সবার দেখা-সাক্ষাৎ হতো। প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আসা-যাওয়া হতো। কিন্তু এবার সেই পরিস্থিতি নেই। আমি নিজে আমার কোনো বন্ধু বা আত্মীয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাইনি। কারণ দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় আমার প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।

×