ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

ক্লাসরুমের দেয়ালে গোবরের প্রলেপ! দিল্লির শিক্ষাঙ্গনে কী চলছে?

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

ক্লাসরুমের দেয়ালে গোবরের প্রলেপ! দিল্লির শিক্ষাঙ্গনে কী চলছে?

ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি নামকরা কলেজে ক্লাসরুমের দেয়ালে গোবরের প্রলেপ! বিষয়টি শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, তা-ই ঘটেছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত লক্ষ্মীবাই কলেজে। কলেজের অধ্যক্ষ নিজে গোবর লেপনের কাজ করেছেন এবং বলেছেন এটি একটি গবেষণার অংশ। তবে এই উদ্যোগ ঘিরে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। শিক্ষার্থীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে নিয়েছেন ভিন্নধর্মী প্রতিবাদের পথ।

মহাভারতের অনুশাসন পর্বের অধ্যায় ৭৯-এ উল্লেখ রয়েছে, প্রাচীনকালে গরু নাকি স্বপ্নে দেখেছিল একসময় মানুষ তাদের মলমূত্র মিশ্রিত জলে স্নান করে পবিত্র হবে। সেই প্রেক্ষিতেই ভারতে গৃহপালিত গরুদের মর্যাদা অনেক উঁচুতে। তাদের শরীরের মলমূত্রকে অনেকে 'পবিত্র' ও 'বজ্র' বলে মনে করেন। সেই ভাবনারই যেন আধুনিক প্রয়োগ দেখা গেল দিল্লির শিক্ষাঙ্গনে।

সম্প্রতি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত লক্ষ্মীবাই কলেজে ক্লাসরুম ঠান্ডা রাখতে দেয়ালে গোবরের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লি রাজ্য সরকারের অধীন ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে অধ্যক্ষ প্রত্যুষ ভাটসালা নিজ উদ্যোগে গোবর লেপার সিদ্ধান্ত নেন।

শুধু নির্দেশনাই নয়, এক কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে নিজ হাতে দেয়ালে গোবরের প্রলেপ দেন তিনি। এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা নিয়ে শুরু হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ অধ্যক্ষের পরিবেশবান্ধব চিন্তা ও সক্রিয় অংশগ্রহণকে সাধুবাদ জানান, কেউ আবার বিষয়টিকে অপেশাদার ও অযৌক্তিক বলে কটাক্ষ করেন।

অধ্যক্ষ প্রত্যুষ ভাটসালা জানান,“এটা একটি গবেষণা প্রকল্পের অংশ। লক্ষ্য দিল্লির প্রচণ্ড গরমে প্রাচীন ভারতীয় পদ্ধতিতে ক্লাসরুম ঠান্ডা রাখার উপায় অনুসন্ধান। গোবর একটি প্রাকৃতিক তাপ নিরোধক উপাদান। দেয়ালে গোবর লাগালে তাপমাত্রা অনেক কমে আসে। এতে পড়াশোনার পরিবেশ আরও আরামদায়ক হয়। গবেষণা শেষ হলে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।”

তবে এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ কলেজের অনেক শিক্ষার্থী। ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদে। শিক্ষার্থীরা গোবর নিয়ে প্রবেশ করেন অধ্যক্ষের কক্ষে। ইন্সটাগ্রামে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, 'রণক ক্ষেত্রী' নামের এক শিক্ষার্থী নিজেই প্রিন্সিপালের অফিস ও বাথরুমের দেয়ালে গোবর লাগাচ্ছেন।

ক্ষেত্রী বলেন,“অধ্যক্ষ ইউজিসির নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। এ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ক্লাসরুমে এসি স্থাপনের দাবি জানানো হয়েছে।”

উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক উপায়ে ক্লাসরুম ঠান্ডা রাখার চিন্তা নিঃসন্দেহে অভিনব। তবে তা বাস্তবায়নের ধরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যেখানে আধুনিক শিক্ষাঙ্গনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান প্রত্যাশিত, সেখানে প্রাচীন পদ্ধতির এই প্রয়োগ আদৌ কতটা যৌক্তিক,তা নিয়ে চলছে বিস্তর বিতর্ক।

 

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/yru9tt6p

আফরোজা

×