ছবিঃ সংগৃহীত
মহাভারতের অনুশাসন পর্বের অধ্যায় ৭৯-এ এসেছে, প্রাচীনকালে নাকি গরুগুলো স্বপ্নে দেখেছিল যে, একসময় মানুষ তাদের মলমূত্র মিশ্রিত জলে স্নান করে পবিত্র হবে। ভারতে তাই নিজের জন্মদাতা মায়ের চেয়ে গৃহপালিত গরুর মর্যাদা অনেক বেশি। গরুর শরীরের ‘বজ্র’ অর্থাৎ মলমূত্র তাদের কাছে পূজনীয়।
এবার ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসরুম ঠান্ডা রাখতে গোবরের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত লক্ষ্মীবাই কলেজে এই ঘটনা ঘটেছে, আর তা নিয়েই তোলপাড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই গোবর লেপনের নেতৃত্ব দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানায়, দিল্লি রাজ্য সরকারের অধীনস্থ ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজের অধ্যক্ষ প্রত্যুষ ভাটসালা চলতি সপ্তাহে নিজ উদ্যোগে ক্লাসরুমের দেয়ালে গোবর লেপনের শুধু নির্দেশনাই দেননি, বরং একজন কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে নিজ হাতে গোবর লাগানোর কাজও করেন।
তিনি গোবর লেপনের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে, অধ্যক্ষের পরিবেশবান্ধব চিন্তা ও নিজ হাতে কাজে অংশগ্রহণ করাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেক ভারতীয়। অধ্যক্ষ প্রত্যুষ ভাটসালা বলেন, "এটা একটি গবেষণা প্রকল্পের অংশ। লক্ষ্য—দিল্লির প্রচণ্ড গরমে প্রাচীন ভারতীয় পদ্ধতিতে ক্লাসরুম ঠান্ডা রাখার উপায় অনুসন্ধান।"
তিনি জানান, গোবর একটি প্রাকৃতিক তাপ নিরোধক উপাদান। দেয়ালে গোবর লাগালে তাপমাত্রা অনেক কমে আসে, এতে পড়াশোনার পরিবেশ আরও আরামদায়ক হয়। তার দাবি, গবেষণা শেষ হলে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
তবে অধ্যক্ষের এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ কলেজের অনেক শিক্ষার্থী। ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদে। শিক্ষার্থীরা গোবর নিয়ে ঢুকে পড়েন অধ্যক্ষের কক্ষে।
ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রণক ক্ষেত্রী নামের এক শিক্ষার্থী নিজেই প্রিন্সিপালের অফিস ও বাথরুমের দেয়ালে গোবর লাগাচ্ছেন। ক্ষেত্রী জানান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ইউজিসি-র নিয়মভঙ্গের অভিযোগ এনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ক্লাসরুমে এসি স্থাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ক্লাসরুম ঠান্ডা রাখার চিন্তা নিঃসন্দেহে অভিনব। তবে, তা বাস্তবায়নের ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষাঙ্গনে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান যেখানে প্রত্যাশিত, সেখানে প্রাচীন পদ্ধতি প্রয়োগ কতটা যৌক্তিক—সেটি নিয়েই চলছে তুমুল বিতর্ক।
ইমরান
