
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ আফ্রিকার স্টার্কফন্টেইন গুহাগুলোতে প্রাচীন চুনাপাথরের শিলাগুলো দেখে বিস্মিত হচ্ছিলেন দর্শনার্থীরা। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ঝুলে থাকা এসব প্রাকৃতিক গঠন যেন ইতিহাসের নিঃশব্দ সাক্ষী।
জোহানেসবার্গ থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই গুহাগুলো প্রায় তিন বছর আগে প্রবল বন্যার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে মঙ্গলবার সেগুলো আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে, তবে এবার একটু ভিন্নভাবে—পর্যটকদের আরও কাছ থেকে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অভিজ্ঞতা নিতে দিচ্ছে এই উদ্যোগ।
এই গুহাসমূহ ‘ক্রেডল অব হিউম্যানকাইন্ড’ নামে পরিচিত ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলের অংশ, যা প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শনের এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। এখান থেকেই পাওয়া গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বিখ্যাত কঙ্কাল “লিটল ফুট”—নব্বইয়ের দশকে আবিষ্কৃত ছোট হাড়ের জন্য এমন নামকরণ। আনুমানিক ১৫ থেকে ৩৭ লাখ বছর পুরোনো এই কঙ্কালটি এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রাচীনতম ও সবচেয়ে পূর্ণ মানব পূর্বপুরুষদের একটি।
“লিটল ফুট” ছিল অস্ট্রালোপিথেকাস প্রজাতির, যার অর্থ লাতিনে “দক্ষিণের বনমানুষ”। আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ বলে ধরা হয় এই গোষ্ঠীকে, যাদের শরীরে মানুষের মতো ও বনমানুষের মতো বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ ছিল।
কোভিড-১৯ মহামারির আগমুহূর্ত পর্যন্ত বছরে প্রায় এক লাখ দর্শনার্থী এই গুহা পরিদর্শনে আসতেন। হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে একধরনের শূন্যতা অনুভব করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। উইটওয়াটারসর্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ডমিনিক স্ট্র্যাটফোর্ড এএফপিকে বলেন, “সবাই অনুভব করছিল, যেন কিছু একটা হারিয়ে গিয়েছে।”
পুনরায় চালু হওয়ার অংশ হিসেবে একটি অস্থায়ী জীবাশ্ম প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে গুহার মিউজিয়ামে। এখানে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন “মিসেস প্লেস” নামের একটি বিখ্যাত জীবাশ্ম—অস্ট্রালোপিথেকাস আফ্রিকানাস প্রজাতির সবচেয়ে পূর্ণ মাথার খুলি, যা ১৯৪৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় খুঁজে পাওয়া যায়।
হেলমেট পরিহিত দর্শনার্থীদের নীল এলইডি আলোয় আলোকিত ২.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ গুহার ভেতর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন গাইড ট্রেভর বুটেলেজি। এক পর্যায়ে তিনি ইঙ্গিত করলেন একটি রহস্যময় অন্ধকার সুড়ঙ্গের দিকে, যা শেষমেশ গিয়ে মিশেছে একটি ভূগর্ভস্থ হ্রদে।
শহীদ