ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

যে নারীর কারণেই বদলে যাচ্ছে দুবাইয়ের নির্মাণ শিল্প

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৫৫, ১৭ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৮:৫৬, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

যে নারীর কারণেই বদলে যাচ্ছে দুবাইয়ের নির্মাণ শিল্প

ছবি: সংগৃহীত

জন্মসূত্রে ধনী পরিবারের সন্তান হলেও জীবন যে একেবারে সহজ ছিল না, তা নিজেই প্রমাণ করেছেন মিসরীয় নারী মারিয়াম আজমি। দুবাইয়ের শীর্ষ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ইনোভোর প্রধান পিপল অফিসার এবং দুই সন্তানের জননী।

উচ্চমানের পোশাক আর আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিত্বে সজ্জিত এই নারীর জীবনযাত্রা যতটা বিলাসবহুল, ঠিক ততটাই প্রেরণাদায়ী তার পেশাগত অবদান।

“হ্যাঁ, টাকার অভাব কখনও ছিল না,” অকপটে স্বীকার করেন মারিয়াম। “বাসায় এক ড্রয়ার ভর্তি টাকার বান্ডিল ছিল। কলেজে কোনো বিল দিতে হতো, সেখান থেকেই নিয়ে নিতাম।”

তবে এই অর্থপ্রাচুর্য কখনও তাকে গড়পড়তা করে তোলেনি। বরং শৈশব থেকেই শেখা নিয়ন্ত্রিত জীবনের শিক্ষা তাকে আলাদা করেছে। “টাকা কখনই ভোগের বস্তু ছিল না। প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যম ছিল মাত্র,” বলেন তিনি।

বিশাল সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়েও মারিয়াম নিজের প্রথম মিলিয়ন আয় করেছেন একেবারে নিজের প্রচেষ্টায়। কর্মস্থলে মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দিয়ে, ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতা এনে এবং মানবসম্পদ বিভাগকে একটি প্রগতিশীল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তর করে।

“টাকার জন্য কাজ করো না,” বলেন মারিয়াম। “কাজ করো লক্ষ্য, উৎসাহ এবং বৃহত্তর কিছুর অংশ হবার জন্য। টাকা এমনিতেই আসবে—নিশ্চিতভাবেই আসবে।”

এইচআর ব্যবস্থাপনাকে কেবল নিয়ম-নীতির মধ্যে না রেখে ‘মানবিক সম্পদ’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান তিনি। এজন্য একসময় নিজের পদবিই পরিবর্তনের কথা ভেবেছিলেন—‘চিফ হ্যাপিনেস অফিসার’ রাখার ভাবনাও ছিল। “মানুষই একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে কিংবা ধ্বংস করে। তাই তাদের মানসিক স্বাস্থ্যই এখন আমাদের আসল মুদ্রা।”

মারিয়ামের নেতৃত্বে ইনোভো এখন ২৪ ঘণ্টার মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা সেবা চালু করেছে কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য। “আপনি কি প্রিয়জন হারিয়েছেন? ধূমপান ছাড়তে চান? ফোন করুন—কোনো প্রশ্ন করা হবে না।”

পুরুষ-প্রধান নির্মাণশিল্পে নারীর নেতৃত্বকে সামনে এনেছেন তিনি। যোগ্যতায় সমান হলে নারীকেই অগ্রাধিকার দেন বলে অকপটে জানিয়েছেন মারিয়াম।

“নির্মাণ খাতে পুরুষরাই আধিপত্য বিস্তার করে। কিন্তু যোগ্য দুই প্রার্থীর মধ্যে একজন যদি নারী হন, আমি তাকেই নিই—বিনা দ্বিধায়।”

এদিকে নিজের স্বপ্নের বাড়িও নিজেই গড়ে তুলছেন মারিয়াম—ইন্টিরিয়র ডিজাইন থেকে শুরু করে সোফার রঙ নির্বাচন পর্যন্ত সবই তার নিজের পরিকল্পনায়।

সন্তানদের প্রতিও তিনি কঠোর বাস্তবতা শেখাতে সচেষ্ট। “তারা আরামে বড় হচ্ছে, ঠিক আছে। কিন্তু আমি তাদের সব সময় বোঝাতে চেষ্টা করি—টাকা নিজে থেকেই আসে না, আবার হুট করেই চলে যেতে পারে।” টাকা নিয়ে তার দর্শন এককথায় সরল: “টাকাকে লক্ষ্য কোরো না। পরিশ্রম করো, উদ্দীপনা রেখো—টাকা তখনই তোমার পেছনে দৌড়াবে।”

প্রাচুর্যে জন্মেও নিজের সাম্রাজ্য নিজ হাতে গড়ার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছেন মারিয়াম আজমি। যার প্রতিটি সিদ্ধান্ত, মানবিক নীতি এবং নিখুঁতভাবে বাছাই করা বসার চেয়ারে মিশে আছে একটি আধুনিক নেতৃত্বের ছাপ।

শহীদ

আরো পড়ুন  

×