ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

গাড়ি উড়বে আকাশে! মাত্র ২ ঘণ্টায় আবুধাবি থেকে মাসকাট

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৫৫, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

গাড়ি উড়বে আকাশে! মাত্র ২ ঘণ্টায় আবুধাবি থেকে মাসকাট

ছবি: সংগৃহীত

শুক্রবার সকালে শারজাহর আল মামজার সৈকতে সাপ্তাহিক ভ্রমণকারীদের ভিড়, তবে কর্ণিশ রোডে তীব্র যানজট। এই যানজটে আটকে না থেকে কেউ চাইলে চলে যেতে পারেন কাছের একটি নির্দিষ্ট রানওয়েতে। সেখানে একটি বোতাম চাপলেই আপনার গাড়ি রূপ নেবে উড়ন্ত যানে।

এভাবেই ভবিষ্যতের এক নতুন পরিবহনচিত্র তুলে ধরলেন ডাচ কোম্পানি PAL-V-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী রবার্ট ডিঙ্গেমেন্স। বৃহস্পতিবার শারজাহ রিসার্চ, টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন পার্কে (SRTIP) আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয় কোম্পানিটির তৈরি উড়ন্ত গাড়ির প্রোটোটাইপ PAL-V Liberty।

রবার্ট ডিঙ্গেমেন্স বলেন, “এই গাড়িটি আবুধাবি থেকে মাসকাট কিংবা দুবাই থেকে বাহরাইন যেতে সময় নেবে মাত্র ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট।” তিনি জানান, গাড়িটি দুটি আসন ও ২০ কেজি মালামাল বহনে সক্ষম এবং একবারে ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে।

২০০৮ সালে এই গাড়ির উন্নয়ন কাজ শুরু করেন ডিঙ্গেমেন্স। তিনি বলেন, “আমরা অপ্রমাণিত বা অসম্পূর্ণ প্রযুক্তির ওপর নির্ভর না করে, বর্তমান রোড ও এভিয়েশন রেগুলেশন মেনে কার্যকর প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। যার ফলে আমাদের সময় ও প্রচেষ্টা অনেকটাই সাশ্রয় হয়েছে।”

গাড়িটি সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি (EASA) থেকে প্রাথমিক অনুমোদন (No Technical Objection) পেয়েছে।

পিএএল-ভি লিবার্টি কী?
বিশ্বের প্রথম বাস্তবিক অর্থে উড়ন্ত গাড়ি হিসেবে পরিচিত PAL-V Liberty হলো একটি জাইরোপ্লেন ও তিনচাকার গাড়ির সংমিশ্রণ। এটি মাত্র তিন মিনিটে সড়কযান থেকে আকাশযানে রূপ নিতে পারে। গাড়িটির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার এবং উড়তে হলে প্রায় ২০০ মিটার রানওয়ে ও নামার জন্য ৩০ মিটার জায়গা প্রয়োজন হয়।

তবে চালানোর জন্য চালককে PAL-V ইনস্টিটিউট থেকে একটি জাইরোপ্লেন লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী একাধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে PAL-V
PAL-V বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটির পাশাপাশি সৌদি আরবের স্থানীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

PAL-V জানায়, তাদের বর্তমানে ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ইউরোর অর্ডার রয়েছে, যার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছে। দুবাইভিত্তিক অ্যাভিটেরা ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার জন্য ১০১টি লিবার্টি গাড়ির অর্ডার করেছে।

কোন কাজে ব্যবহার হতে পারে এই উড়ন্ত গাড়ি?


রবার্ট ডিঙ্গেমেন্সের মতে, এই গাড়ির ব্যবহারিক দিকগুলো হলো:

  • দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় দ্রুত বিশেষজ্ঞ পাঠানো
  • দুর্ঘটনা হ্রাসে নিরাপদ যাতায়াত
  • যেসব এলাকায় হেলিকপ্টার পৌঁছাতে পারে না, সেসব স্থানে যাতায়াত
  • সীমান্ত পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি
  • শান্তিরক্ষা মিশনে সহায়তা
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফাস্ট রেসপন্স ইউনিট
  • উপকূলরক্ষী বাহিনী
  • দ্রুত কর্মী ও মালামাল পরিবহন (বিশেষ করে অস্ট্রিয়ায় পরীক্ষিত)
  • ভিআইপি ট্যাক্সি সার্ভিস (কুয়েত এয়ারওয়েজের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক)
  • জরুরি ওষুধ সরবরাহসহ লাস্ট মাইল ডেলিভারি (আরমেক্স বিবেচনায় রেখেছে)
  • সামরিক পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তা কার্যক্রম

২০২৭ সালের মধ্যে আকাশে উড়তে প্রস্তুত এই গাড়ি ভবিষ্যতের ব্যক্তিগত পরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষত যানজট ও দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থান মোকাবেলায়।

শহীদ

আরো পড়ুন  

×