
ছবিঃ সংগৃহীত
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মালিকানা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। রাশিয়ার হাতে ইরানের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণভার তুলে দিতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র—যদিও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলছেন ভিন্ন কথা।
এদিকে মাত্র ১২ ঘণ্টার মাথায় ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে নিজের করা মন্তব্য থেকে সরে আসলেন মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকপ। আর ওমান বৈঠক নিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি জানালেন তাঁর নিজের অবস্থান—ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে লাগাম টানতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
১২ এপ্রিল ওমানের মধ্যস্থতায় দেশটির রাজধানী মাসকাটে যুক্তরাষ্ট্র বনাম ইরানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরোক্ষ আলোচনায় ইরানের পক্ষে অংশ নেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। অন্যদিকে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন স্টিভ উইটকপ। একে অপরের সাথে সরাসরি কথার লড়াইয়ে অংশ না নিয়েও যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া যায়, তার প্রকৃত উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের এই বৈঠক।
আলোচনা শেষে আরাকচি ও উইটকপ জানান, ফলপ্রসূ হয়েছে বৈঠক, তবে কোন চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি দুই দেশ। আগামী ১৯ এপ্রিল আবারো আলোচনায় বসবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের ওমানের ওই বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পর মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকপ বলেন, পারমাণবিক শক্তিকে বেসামরিক খাতে ব্যবহারের জন্য ইরানকে নিম্নস্তরের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে নিজেই রাখলেন না নিজের কথা। মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে উইটকপ বললেন, “ইরানের সাথে আমরা কেবল তখনই চুক্তি করব যখন দেশটি ট্রাম্পের শর্ত মেনে নেবে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য ইরানকে ঘিরে একটি কাঠামো প্রস্তুত করতে হবে”—যার অর্থ, ইরানকে তার পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাকে এটি করতে বলেছেন।
১৫ এপ্রিল এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এর আগে ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, পারমাণবিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমঝোতায় না বসলে ইরানজুড়ে ভয়াবহ সামরিক হামলা চালাবে ওয়াশিংটন। আর এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পরই খামেনির জ্যেষ্ঠ সামরিক উপদেষ্টা আলী শামখানি বলেন, “আমাদের প্রতি এই ধরনের চাপ প্রয়োগ করলে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর পরিদর্শকদের বহিষ্কার করা সহ সংস্থাটিকে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করে দেবে ইরান। এমনকি পারমাণবিক কর্মসূচি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নেবে তেহরান।”
যুক্তরাষ্ট্র মূলত ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে দেশটির এই কার্যক্রম রাশিয়ার হাতে অর্পণ করতে চায়। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভকে এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমি এই প্রশ্নের কোনও মন্তব্য করতে রাজি নই।”
১৫ এপ্রিল এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রয়টার্স। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়া সফরে যান ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান। এ সময় তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে কৌশলগত বিভিন্ন চুক্তি করেন, যার মধ্যে পারমাণবিক কার্যক্রমের বিষয়টিও রয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে এক মন্তব্যে সম্প্রতি রাশিয়া জানায়, শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার আছে তেহরানের। ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসনের সামরিক অভিযান সম্পূর্ণ অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য হবে।
এদিকে ওমানে অনুষ্ঠিত বৈঠক প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি। তেহরানে অনুষ্ঠিত দেশটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে এক বৈঠকে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, “ওমানে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অনুষ্ঠিত আলোচনার ব্যাপারে আমি আশাবাদী কিংবা হতাশ নই। তবে ইরানের সমস্যা সমাধানে ওমানের ওই আলোচনার ফলাফলের উপর নির্ভরশীল নই।”
তেহরান পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে ইরান বোমা তৈরি করছে—এমন অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের। যদিও তেহরান পশ্চিমাদের ওই অভিযোগ সবসময় উড়িয়ে দিয়ে আসছে। ইরানের দাবি, তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম কেবলই বেসামরিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে পশ্চিমাদের শঙ্কা, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে সফল হলে তা ইসরায়েল এবং উপসাগরীয় আরব তেল-উৎপাদনকারী দেশগুলোকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। সেই সাথে আঞ্চলিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নামতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।
ইমরান