
ছবি : সংগৃহীত
বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সত্ত্বেও রুশ রুবল এ বছর বিশ্বের সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করা মুদ্রায় পরিণত হয়েছে। নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুবলের মান প্রায় ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সুইডিশ ক্রোনা (১৩%) এবং সুইস ফ্রাঁক (১১%)-এর মতো শক্তিশালী মুদ্রাগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত সোনা (২৩%) ও রূপার (১২%) চেয়েও বেশি রিটার্ন দিয়েছে রুবল।
রুবলের এই অভূতপূর্ব উত্থানের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করেছে। প্রথমত, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও যুদ্ধকালীন অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে নীতিগত সুদের হার ২১ শতাংশে উন্নীত করেছে। দ্বিতীয়ত, ক্রেমলিন বিদেশি কোম্পানিগুলোর রাশিয়া থেকে অর্থ প্রত্যাহার নিষিদ্ধ করেছে এবং বিশেষ অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে, যা রুবলের চাহিদা বাড়িয়েছে। তৃতীয়ত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ ও আমদানি শুল্ক নীতির কারণে ডলারের ওপর আস্থা কমে গেছে, যার সুবিধা পেয়েছে বিকল্প মুদ্রাগুলো।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রুবলের এই শক্তিশালী অবস্থান রাশিয়ার জন্য স্বল্পমেয়াদি সাফল্য বয়ে আনলেও দীর্ঘমেয়াদে এর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। জেপি মর্গানের প্রধান নির্বাহী জেমি ডাইমন সতর্ক করেছেন যে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বৈশ্বিক মন্দার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে সিটিগ্রুপের প্রধান নির্বাহী জেন ফ্রেজার মনে করেন, ডলার এখনও বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে তার অবস্থান ধরে রাখবে।
বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাশিয়ার কঠোর মুদ্রানীতি ও পুঁজি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রুবলকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করছে। তবে যুদ্ধ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে এই অবস্থান কতদিন টিকিয়ে রাখা যায়, তা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে, মার্কিন ডলারের পতনকে অনেকেই সাময়িক বলে মনে করছেন, কারণ বিশ্ব বাণিজ্যের ৬০ শতাংশ এখনও ডলারেই হয়ে থাকে। রুবলের এই উত্থান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করলেও এর স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
আঁখি