
ছবিঃ সংগৃহীত
পাকিস্তান নিজেদের তৈরি করা সন্ত্রাসের ফাঁদেই এখন জড়িয়ে পড়েছে—এমনটাই মন্তব্য করলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। গুজরাটের চরোতার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, “পাকিস্তান একসাথে তালেবান ও তাদের বিরোধীদের সঙ্গেও খেলছিল। কিন্তু যখন আমেরিকা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেল, তখন তাদের এই দ্বিমুখী খেলা আর চালানো সম্ভব হলো না।”
তিনি জানান, এই গোটা অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদকে “শিল্প” বা “ইন্ডাস্ট্রি” বানানোর মূল কারিগর ছিল পাকিস্তান। আর এখন সেই সন্ত্রাসই উল্টো তাদের দিকেই ফিরে এসেছে।
“তারা আগে যেটুকু সুবিধা পাচ্ছিল, আমেরিকার চলে যাওয়ার পর তাও বন্ধ হয়ে যায়। আর তারা যেই সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিয়েছিল, এখন সেটাই তাদের বিপদে ফেলেছে,” বলেন ড. জয়শঙ্কর।
তিনি ২০০৮ সালের মুম্বই হামলাকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বড় মোড় বলে উল্লেখ করেন। “ওই হামলার পর ভারতীয়দের মনে খুব স্পষ্ট একটা বার্তা তৈরি হয়েছিল—প্রতিবেশী দেশের এমন আচরণ আর বরদাস্ত করা যায় না। তখনকার সরকার সেটা হয়তো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি, কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে সেই অনুভূতি ছিল প্রবল,” বলেন তিনি।
গত এক দশকে ভারত ও পাকিস্তানের পথ কতটা আলাদা হয়েছে, সেটাও তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। “ভারত অনেক বদলেছে। আফসোস, পাকিস্তানকে নিয়ে সেটা বলা যায় না। তারা এখনো পুরনো অভ্যাসেই আটকে আছে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ২০১৪ সালে ভারতের সরকার পরিবর্তনের পর পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছিল—সন্ত্রাসবাদ চালালে তার ফল ভোগ করতে হবে। “এই সময়ে ভারত যেমন অর্থনৈতিকভাবে, তেমনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। পাকিস্তান কিন্তু তখনো পুরনো খেলা চালিয়ে গেছে।”
এখন ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি একদম পরিষ্কার, বলেন তিনি—“পাকিস্তান নিয়ে আর মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আমাদের মূল্যবান সময় সেদিকে নষ্ট করার প্রয়োজন নেই।”
এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী তাহাওয়ুর রানাকে যুক্তরাষ্ট্র ভারত সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে। ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সন্ত্রাস দমনে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা রয়েছে।
রানাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “আমরা তাহাওয়ুর হুসেইন রানাকে ভারতে পাঠিয়েছি যাতে ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার পরিকল্পনার জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়। আমরা বহু বছর ধরেই ভারতের সঙ্গে মিলেই এই বর্বর হামলায় নিহত ১৬৬ জন, যার মধ্যে ৬ জন আমেরিকানও ছিলেন, তাদের জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে আসছি। অবশেষে সেই দিন এসেছে।”
এর জবাবে এস. জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের দুই দেশের মধ্যে সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ। ২৬/১১ হামলার ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এটি এক বড় পদক্ষেপ।”
মারিয়া