
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘ তিনদিনের ছুটির স্বপ্ন এবার বাস্তব রূপ পাচ্ছে। মহামারির পরবর্তী সময়ে কাজের সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তনের ধারায় চারদিনের কর্মসপ্তাহ এখন একটি বাস্তব আলোচনার বিষয়। নতুন এই মডেল অনুসরণ করে অনেক দেশ, প্রতিষ্ঠান ও কর্মীরা পুনরায় ভাবছেন—উৎপাদনশীলতা ও সুস্থ কর্মজীবনের সঠিক ভারসাম্য আসলে কেমন হওয়া উচিত।
চারদিনের কর্মসপ্তাহে "১০০-৮০-১০০" মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ, কর্মীরা পূর্ণ বেতন পাচ্ছেন, কাজ করছেন ৮০% সময়ে, এবং দক্ষতা বজায় রাখছেন শতভাগ। এটি মূলত ‘4 Day Week Global’ নামে একটি উদ্যোগের অংশ, যা প্রথম শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের শেষ দিকে জার্মানিতে। এই পদ্ধতি ইতিমধ্যেই সফলভাবে প্রয়োগ হয়েছে স্পেন, পর্তুগাল এবং যুক্তরাজ্যে।
বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর মধ্যেও—আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ডস—এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। চারদিনের কর্মসপ্তাহ শুধু বার্নআউট কমায় না, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটায়, কাজের সন্তুষ্টি বাড়ায় এবং অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পায়।
জাপান
২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জাপানে সরকারী কর্মীদের জন্য চারদিনের কর্মসপ্তাহ চালু হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য কর্ম-জীবন ভারসাম্য উন্নত করা এবং হ্রাসমান জন্মহারের মোকাবিলা করা। পাশাপাশি চালু হয়েছে "চাইল্ডকেয়ার পারশিয়াল লিভ" নামের নতুন নীতিমালা, যেখানে অভিভাবক কর্মীরা প্রতিদিন দুই ঘণ্টা কম কাজ করতে পারবেন।
টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কোইকি জানান, "নারীদের যেন ক্যারিয়ার ও পরিবারের মধ্যে বেছে নিতে না হয়, তাই নমনীয় কর্মপদ্ধতির গুরুত্ব অনেক।" বর্তমানে জাপানের গড় জন্মহার ১.২, টোকিওতে আরও কম—মাত্র ০.৯৯। এই ব্যবস্থায় পুরুষদের গৃহস্থালি দায়িত্বে আরও সক্রিয় করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বেলজিয়াম
২০২২ সালে ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে বেলজিয়াম আইনগতভাবে চারদিনের কর্মসপ্তাহ চালু করে। কর্মীরা সপ্তাহের ৪০ ঘণ্টা কাজ ৪ দিনের মধ্যে শেষ করতে পারেন, বেতন হ্রাস ছাড়াই। "রাইট টু ডিসকানেক্ট" নীতিমালার মাধ্যমে কর্মীদের অফিস আওয়ারের বাইরে কাজের বার্তা উপেক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে।
জার্মানি
২০২৩-২৪ সালে জার্মানিতে ৪১টি কোম্পানিতে চারদিনের কর্মসপ্তাহ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়, যেখানে ৭৩% কোম্পানি এটি স্থায়ী করতে চায়। গড়ে ৩৪ ঘণ্টার কাজের সপ্তাহ নিয়ে পরিচিত এই দেশ মনে করে, কম সময় মানেই কম কাজ নয়—বরং আরও কার্যকর ও মনোযোগী কাজের পন্থা।
আইসল্যান্ড
২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আইসল্যান্ডে চলা পরীক্ষায় দেখা যায়, ৪০ ঘণ্টার পরিবর্তে ৩৫-৩৬ ঘণ্টা কাজ করেও উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা যায়। ২০২২ সালের মধ্যে দেশটির অর্ধেকের বেশি কর্মী কম সময়ের কাজের সুযোগ পান। পাশাপাশি দেশটির অর্থনীতি ছিল স্থিতিশীল, এবং কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি লক্ষণীয়।
ডেনমার্ক
যদিও ডেনমার্ক আনুষ্ঠানিকভাবে চারদিনের কর্মসপ্তাহ চালু করেনি, দেশটির গড় কর্মসপ্তাহ মাত্র ৩৭ ঘণ্টা। ড্যানিশ সংস্কৃতিতে ‘হিউগে’ নামে পরিচিত আরামদায়ক ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের ধারণাটি কর্মসংস্কৃতিতেও প্রতিফলিত হয়েছে। কর্মীরা বছরে একটানা পাঁচ সপ্তাহের ছুটিও উপভোগ করতে পারেন।
ফারুক