ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

অপরাধ নয় প্রতিশোধ! পরিচয় ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী, মার্কিন নাগরিকত্ব সাক্ষাৎকার দিতে এসে গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১৯:৪৮, ১৫ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৯:৪৯, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

অপরাধ নয় প্রতিশোধ! পরিচয় ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী, মার্কিন নাগরিকত্ব সাক্ষাৎকার দিতে এসে গ্রেফতার

ছবিঃ সংগৃহীত

মোহসেন মাহদাভি। একজন তরুণ, যিনি জন্মেছিলেন ফিলিস্তিনের একটি শরণার্থী শিবিরে। ছোটবেলায় দেখেছেন নিজের চাচাকে ইসরায়েলি সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে। রাতে ঘুম থেকে উঠে শিবিরে নিহত সাতজনের শরীরের টুকরো কুড়িয়ে এনেছিলেন নিজ হাতে। সেই ভয়াবহ স্মৃতিগুলো তাঁর হৃদয়ে গভীরভাবে গেঁথে আছে।

তবুও স্বপ্ন দেখতেন তিনি—শান্তির, ন্যায়ের, শিক্ষার। যুক্তরাষ্ট্রে এসে উচ্চশিক্ষা নেওয়া সেই স্বপ্নের পথে তিনি এগিয়েছিলেন সাহসিকতার সঙ্গে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে দর্শন বিভাগে পড়ছিলেন, সামনে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার কথা।

কিন্তু ২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল সেই স্বপ্নে বড় একটা ধাক্কা লাগল। নাগরিকত্বের সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে হঠাৎই গ্রেফতার করল মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা।

মোহসেনের অপরাধ? তিনি একজন ফিলিস্তিনি। এবং তিনি গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

মোহসেন ২০১৫ সাল থেকে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, গ্রিন কার্ডধারী হিসেবে। তাঁর কোনো অপরাধ নেই। তবুও, তাঁর আইনজীবী লুনা দ্রুবি বলছেন, “এই গ্রেফতার একেবারে প্রতিহিংসামূলক। তিনি যে একজন ফিলিস্তিনি এবং নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলেন, সেটাই এখন অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

এই গ্রেপ্তারের পরে দ্রুত হস্তক্ষেপ করেন এক মার্কিন বিচারক—জানা গেছে, তাঁকে যেন রাজ্য বা দেশের বাইরে না নেওয়া হয়, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এবং স্থানীয় কংগ্রেস সদস্যরা একবাক্যে বলেছেন, “মোহসেনের এই গ্রেপ্তার অনৈতিক, অমানবিক এবং অবৈধ। তাঁকে মুক্তি দিতে হবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি ভয়ঙ্কর নজির স্থাপন করছে। শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আজ প্রশ্নের মুখে। বিশেষ করে যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন—তাঁদের চুপ করিয়ে দিতে চায় প্রশাসন।

এই প্রথম নয়। এর আগে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্র মাহমুদ খালিলকে ডিপোর্ট করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, যদিও তাঁর বিরুদ্ধেও কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই। শুধু মত প্রকাশ করায় তাঁকে দেশছাড়া করা হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ১৭০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে, যাঁদের বেশিরভাগই ইসরায়েল-বিরোধী প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন।

মোহসেন শুধু প্রতিবাদ করতেন না, তাঁর কণ্ঠে ছিল সাহস আর সত্যের ভাষা। একবার এক ব্যক্তি এসে তাঁকে বলেছিলেন, “তোমাকে আমি মেরে ফেলব।” তবুও তিনি ভয় পাননি। কারণ তিনি জানতেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই তাঁর কর্তব্য।

আজ তাঁর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তবে অনেকেই বলছেন—মোহসেন একা নন। সত্যের পাশে যারা আছে, তারা সব সময় একে অপরের পাশে দাঁড়ায়।

তথ্যসূত্রঃ https://www.aljazeera.com/news/2025/4/15/palestinian-student-arrested-at-us-citizenship-interview-over-gaza-protests?

মারিয়া

আরো পড়ুন  

×