ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

বর্তমানে গাজায় নৃশংস হত্যা মূলত নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করছে, যুদ্ধ বন্ধের চিঠিতে ইসরায়েলি সেনারা

প্রকাশিত: ১৭:৫৫, ১৫ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৮:০০, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

বর্তমানে গাজায় নৃশংস হত্যা মূলত নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করছে, যুদ্ধ বন্ধের চিঠিতে ইসরায়েলি সেনারা

ছবিঃ সংগৃহীত

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গোলানি ব্রিগেডের ১৫০ জন সৈন্য একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করে গাজায় চলমান যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন এবং যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির লক্ষ্যে শান্তি আলোচনা শুরুর দাবি তুলেছেন। ইসরায়েলি আর্মি রেডিও জানিয়েছে, এই চিঠি এমন এক সময়ে এসেছে যখন যুদ্ধবিরোধী পিটিশনগুলো দেশজুড়ে বাড়ছে এবং জনমনে যুদ্ধ নিয়ে অসন্তোষ আরও গভীর হচ্ছে।

গত কয়েকদিনে অন্তত ১০টি পিটিশন প্রকাশ হয়েছে, যেগুলোর মূল দাবি হলো—যুদ্ধের বদলে বন্দীদের মুক্ত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। প্রথম পিটিশনটি ছিল প্রায় ১,০০০ জন বর্তমান ও প্রাক্তন বিমান বাহিনীর রিজার্ভ সেনার সম্মিলিত কণ্ঠ, যারা বলছেন গাজায় এই যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে নয়। এই বক্তব্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর সমালোচনা হিসেবে ধরা পড়েছে।

এই পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলি চিফ অব স্টাফ এয়াল জামির এবং বিমান বাহিনী, পিটিশনে স্বাক্ষর করা কর্মরত রিজার্ভ সেনাদের বরখাস্ত করেন। নেতানিয়াহু এই বরখাস্তের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, এসব পিটিশন বিদেশি অর্থে পরিচালিত একটি ছোট গোষ্ঠীর কাজ যারা তাঁর সরকারকে উৎখাত করতে চায়।

এই ঘটনার বাইরে আরও কয়েকটি পেশাগত ও সামরিক গোষ্ঠী যুদ্ধবিরোধী পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে আছেন ১৫০ জন সাবেক নৌ কর্মকর্তা, ২৫০ জন ইউনিট ৮২০০-এর সাবেক সদস্য, ১,৫২৫ জন ট্যাংক বাহিনীর প্রাক্তন সদস্য—যাদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাকও রয়েছেন। একইসঙ্গে প্রযুক্তি খাতের ৫০০ জন উদ্যোক্তা ও কর্মী, ২,০০০ সামরিক চিকিৎসক, এবং ৬,০০০ এরও বেশি শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। এমনকি মোসাদ ও শিন বেত গোয়েন্দা সংস্থার শত শত সাবেক কর্মী এবং পদাতিক, প্যারাট্রুপার ও বিশেষ বাহিনীর হাজারো প্রাক্তন সেনাও স্বাক্ষর করেছেন।

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস একটি প্রতিরোধ অভিযান চালায়, যা ছিল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চালানো দীর্ঘমেয়াদি নিপীড়নের জবাব। হামাস এই অভিযানে ২৫১ জন ইসরায়েলিকে বন্দী করে, যাদের মধ্যে এখন ৫৮ জন গাজায় রয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন মারা গেছেন। ধারণা করা হয়, ইসরায়েলি হামলাতেই বন্দীদের অনেকের মৃত্যু হয়েছে।

এই দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ইসরায়েল এখনো তার প্রধান দুটি লক্ষ্য—হামাসকে ধ্বংস করা ও বন্দীদের উদ্ধার করা—অর্জন করতে পারেনি। বিপরীতে, এই যুদ্ধের ফলে অন্তত ৫০,৯৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এই বাস্তবতা ইসরায়েলি সমাজে গভীর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—এই যুদ্ধ কি সত্যিই নিরাপত্তার জন্য, নাকি রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য পরিচালিত? এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, এই সহিংসতা আর কতদিন চলবে?

তথ্যসূত্রঃ https://www.presstv.ir/Detail/2025/04/15/746197/Golani-Brigade-urge-end-Israeli-Gaza-genocide

মারিয়া

আরো পড়ুন  

×