
ছবি: সংগৃহীত।
মধ্যপ্রাচ্যের হৃদয়ে এক শতাব্দীর পুরনো একটি রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব—ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সংঘাত। প্রায় প্রতিটি দশকে নতুন করে রূপ নেওয়া এই যুদ্ধ শুধু দুই জাতির সীমান্ত বিরোধ নয়, বরং এর শিকড় গভীরভাবে প্রোথিত আছে ইতিহাস, উপনিবেশবাদ, ধর্ম, ভূরাজনীতি ও জাতিসত্তার দাবিতে। ২০২৩-২৪ সালে গাজায় ইসরাইলি হামলা আবারও বিশ্বের নজর ঘুরিয়ে দিয়েছে এই পুরোনো কিন্তু এখনো অমীমাংসিত সংকটের দিকে।
ইতিহাসের গহ্বরে: দ্বন্দ্বের সূচনা কোথায়?
এই সংঘাতের গোড়া মূলত উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে, যখন ইউরোপে "সিয়োনবাদ" নামক একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের উত্থান ঘটে। সিয়োনবাদীরা একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি তোলে, যার স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয় ফিলিস্তিন—যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আরব মুসলমান, খ্রিস্টান এবং ইহুদি একত্রে বসবাস করছিল।
ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের সময়, ১৯১৭ সালের ব্যালফোর ঘোষণার মাধ্যমে ব্রিটেন ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন জানায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, বিশেষ করে হলোকাস্টের প্রেক্ষাপটে, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক রাষ্ট্র ইহুদি অভিবাসনকে সমর্থন করে।
১৯৪৮: একটি রাষ্ট্রের জন্ম, আরেকটি জাতির উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া
১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গেই ফিলিস্তিনিদের জীবনে নামে বিপর্যয়—"নাকবা" বা মহাবিপর্যয় নামে পরিচিত এই সময়টিতে সাত লাখের বেশি ফিলিস্তিনি নিজ ভূমি থেকে উৎখাত হন। পরবর্তী সাত দশকজুড়ে ইসরাইলি দখল, বসতি নির্মাণ, জেরুজালেম ইস্যু, শরণার্থী সংকট এবং গাজার অবরোধ এই সংঘাতকে আরও জটিল করে তোলে।
বর্তমান বাস্তবতা ও মানবিক সংকট
গাজা উপত্যকা বর্তমানে কার্যত একটি মুক্ত-বন্দিশালা, যেখানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ ইসরাইলি অবরোধের মধ্যে বাস করছে। প্রতিনিয়ত বোমাবর্ষণ, খাদ্য ও ওষুধের সংকট, এবং চরম মানবিক দুর্দশা সেখানে স্বাভাবিক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। অপরদিকে, ইসরাইল নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি দাবি করে গাজার উপর অভিযান চালিয়ে থাকে।
মূল কারণসমূহ সংক্ষেপে:
- উপনিবেশিক ইতিহাস ও সিয়োনবাদ
- ফিলিস্তিনি জমি দখল ও বসতি নির্মাণ
- জেরুজালেমের মালিকানা ও ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ
- শরণার্থী সংকট ও প্রত্যাবাসনের দাবি
- গাজা অবরোধ ও দমননীতি
- আন্তর্জাতিক মহলের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা
ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ শুধু একটি ভৌগোলিক সংঘাত নয়, এটি ইতিহাসের, পরিচয়ের ও ন্যায়বিচারের এক গভীর সঙ্কট। এই সংকটের স্থায়ী সমাধান শুধুমাত্র সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে নয়—বরং রাজনৈতিক সদিচ্ছা, ইতিহাসের স্বীকৃতি ও ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি সমাধান খুঁজে বের করাই সময়ের দাবি।
নুসরাত