
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে ‘মার্চ ফর গাজা’ র্যালির মাধ্যমে লাখো মানুষ ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সমর্থন এবং ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও সহিংসতার প্রতিবাদ জানানোর পর এবার পাকিস্তানেও ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছে লাখো জনতা। ডন পত্রিকার খবরে বলা হয়, রোববার করাচির রাজপথে বিপুলসংখ্যক মানুষ সমবেত হয়ে গাজার বিরুদ্ধে চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।
আনাদোলু এজেন্সির বরাতে জানা যায়, ‘গাজা সংহতি মার্চ’ নামে আয়োজিত এই বিশাল সমাবেশে করাচির শাহরা-এ-ফয়সাল সড়ক উপচে পড়ে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর উপস্থিতিতে। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে তারা ফিলিস্তিনের পতাকা ও হামাসের শীর্ষ দুই নিহত নেতা — ইসমাইল হানিয়া ও ইয়াহিয়া সিনওয়ারের — ছবি বহন করেন।
বিক্ষোভকারীরা বিদ্যুৎ খুঁটির গায়েও বিজয়ের প্রতীকসহ নেতাদের ছবি সম্বলিত পোস্টার টানান। গাজায় নিহত শিশুদের স্মরণে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় সাদা কাফনে মোড়ানো পুতুল, যা সবার মধ্যে গভীর আবেগের জন্ম দেয়।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হাজারো মানুষ এই সমাবেশে অংশ নেন, যাদের মধ্যে অনেকেই সন্তানসহ উপস্থিত ছিলেন। শুধু মুসলমানই নয়, খ্রিস্টান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও এই সংহতির মিছিলে অংশগ্রহণ করেন।
বিক্ষোভে ছিল শক্ত বার্তা — ‘গাজায় বোমা বর্ষণ বন্ধ করো’, ‘ইসরাইল নিপাত যাক’ ও ‘গাজায় গণহত্যা — মুসলিম বিশ্ব লজ্জিত হও’ — লেখা বিশাল ব্যানার। শিক্ষার্থীরা কাঁধে তুলে নেয় ১০০ ফুট দীর্ঘ ফিলিস্তিনি পতাকা, যা বিক্ষোভের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়।
‘লাব্বাইক ইয়া গাজা’ এবং ‘লাব্বাইক ইয়া আকসা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে জনতা — যার অর্থ, ‘গাজা, আমরা আছি’ ও ‘আল-আকসা, আমরা আছি’। এ সময় জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের আমির হাফেজ নাঈম-উর-রহমানসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভকারী আলি মোস্তাফা, যিনি ‘মুক্তি না হলে শহীদ’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন, বলেন, “করাচি ও গোটা পাকিস্তান সবসময় ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকবে।” খ্রিস্টান নেতা ইউনাস সোহান বিশ্ব শক্তিগুলোর নিন্দা জানিয়ে বলেন, “তারা ইসরাইলকে প্রশ্রয় দিচ্ছে সাধারণ মানুষ, হাসপাতাল ও আশ্রয়কেন্দ্রে হামলার সুযোগ করে দিয়ে।”
একই দিন ইসলামপন্থি দল জমিয়াতে উলামা ইসলাম (জেইউআই)-এর উদ্যোগে আয়োজিত ফিলিস্তিন সংহতি সম্মেলনে দলটির প্রধান মাওলানা ফজল-উর-রহমান ইসরাইলকে “সন্ত্রাসী রাষ্ট্র” হিসেবে আখ্যা দিয়ে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কিছু দেশকে যুদ্ধাপরাধে সহযোগিতার জন্য দায়ী করেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এই যুদ্ধের ফলে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
শিহাব