
ছবিঃ সংগৃহীত
গাজায় অসাধ্য সাধন করছেন চিকিৎসকরা। হাতের কাছে পাওয়া খুঁটিনাটি ত্রাণের নামে পাওয়া সামান্য চিকিৎসা সামগ্রী দিয়েই করছেন কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন। এরই মাঝে রেড ক্রিসেন্টের এক প্রকল্পের আওতায় কৃত্রিম হাত ও পা ফিরে পেয়েছে অন্তত ১,৮০০ ফিলিস্তিনি। সামান্য হলেও পাচ্ছেন স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার স্বাদ।
সাত বছর বয়সী শাজা হামদান যুদ্ধ বোঝে না। কিন্তু ইসরাইলি সেনাদের ছোড়া গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তার একটি পা। শাজা হামদান বলে, “আমি ঘরে বসে খেলছিলাম। বাবা এসে বলল, চলো বাইরে হেঁটে আসি। বের হওয়ার সাথেসাথেই বৃষ্টির মতো গুলি শুরু হলো। তখন আমার পায়ে আর বাবার ঘাড়ে গুলি লেগেছে।”
আরেক ফিলিস্তিনি, ২১ বছরের তরুণী ফারাহ আবু কায়নাস। ইসরাইলি আগ্রাসনে তছনছ হয়ে গেছে তার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন। বিমান হামলায় পা হারিয়ে অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে কাটাচ্ছেন মানবেতর দিন। ইসরাইলি বর্বরতায় গুরুতর জখম ও পঙ্গু—এ রকম হাজারো ফিলিস্তিনির চিকিৎসার দায়িত্বে এগিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা রেড ক্রিসেন্টের চিকিৎসকরা। বোমা হামলায় দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি হারানো গাঁজাবাসীদের তো বটেই, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চিকিৎসায় দেখাচ্ছেন নজিরবিহীন সাফল্য। ধ্বংসস্তূপের মাঝেই হাতের কাছে পাওয়া খুঁটিনাটি আর ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে বানিয়ে ফেলছেন কৃত্রিম বা প্রস্থেটিক হাত-পা। সফলভাবে যা ব্যবহার করে হাঁটাচলা, এমনকি দৈনন্দিন ছোটখাটো কাজও করতে পারছে পঙ্গু হয়ে যাওয়া বহু ফিলিস্তিনি।
আহমেদ মুসা নামের এক চিকিৎসক বলেন, “আমরা গেল বছর অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন হাসপাতালে এ কার্যক্রম চালাচ্ছি। জায়গার অভাব, প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রীর অভাবে প্রতিদিনই নানা রকম সংকটের মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। তবুও এ পর্যন্ত ১,৮০০ মানুষের কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে কমপক্ষে ৩,০০০ মানুষ নিবন্ধন করেছে।”
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ও রেড ক্রিসেন্টের জরিপ মতে, ইসরাইলি আগ্রাসনে হাত, পা, এমনকি মেরুদণ্ডের হাড় পর্যন্ত হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অন্তত ৪,৫০০ ফিলিস্তিনি। এর মাঝে কমপক্ষে ২,০০০ ভুক্তভোগীর প্রয়োজন জরুরি চিকিৎসা ও রক্ষণাবেক্ষণ।
আইসিআরসি-এর মুখপাত্র হিশাম মাহনা বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য বিশাল মানসিক শক্তির প্রয়োজন। যারা হামলায় নিজেদের অঙ্গ হারিয়েছে, আমরা তাদের চিকিৎসার পাশাপাশি যথাসাধ্য সহায়তা করার চেষ্টা করছি।”
চিকিৎসা সামগ্রীর অপ্রতুলতার মাঝেই গাঁজায় ক্রমাগত বেড়েই চলেছে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা। হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তবুও ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর তারা।
ইমরান