
ছবিঃ সংগৃহীত
১৯৩০-এর দশকে পোল্যান্ড থেকে আগত ইহুদিরা ফিলিস্তিনের গাজার উত্তরে কিবুটস এলাকায় কৃষি খামার গড়ে তোলে। সে সময় একই এলাকায় শতাব্দী ধরে বসবাসরত ফিলিস্তিনি আরবরাও কৃষিকাজ করত। শুরুতে মুসলিম ও ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক মোটামুটি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে ইহুদিদের দলবদ্ধ আগমন এবং ভূমি ক্রয়ের কারণে ফিলিস্তিনিরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তারা বুঝতে পারে, তারা নিজেদের জমি হারাতে শুরু করেছে।
ইহুদিরা বহু আগ থেকেই আলাদা রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখছিল। ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফোর ‘বেলফোর ঘোষণা’-র মাধ্যমে ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই সময় ফিলিস্তিন ছিল ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। ইউরোপে, বিশেষত নাৎসি জার্মানির শাসনে ইহুদিদের উপর চরম নির্যাতন এবং গণহত্যা ইহুদি অভিবাসনকে ত্বরান্বিত করে। হাজার হাজার ইহুদি জাহাজে করে ফিলিস্তিনে আসতে থাকে, ফলে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের অস্তিত্বের সংকটে পড়ে এবং বিদ্রোহ শুরু করে।
এই আরব বিদ্রোহ ব্রিটিশ সৈন্যরা কঠোরভাবে দমন করে, কিন্তু এর ফলে আরব সমাজে বিভাজন তৈরি হয়। অপরদিকে ইহুদিরা সুসংগঠিতভাবে তাদের রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তুতি চালিয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলারের অত্যাচার থেকে বেঁচে যাওয়া ইহুদিদের জন্য একটি নিরাপদ রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা আন্তর্জাতিক মহলে প্রবলভাবে আলোচিত হয়।
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ করার প্রস্তাব দেয় – একটি ইহুদিদের জন্য এবং অন্যটি আরবদের জন্য। যদিও ইহুদিরা মোট জমির মাত্র ১০% এর মালিক ছিল, তবুও তাদেরকে ভূখণ্ডের প্রায় অর্ধেক দেয়া হয়। এই বৈষম্য আরবরা মেনে নিতে পারেনি এবং প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়।
১৯৪৮ সালের ১৪ মে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে, ইহুদি নেতারা সেদিনই ইসরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। পরদিনই মিশর, জর্ডান, সিরিয়া, ইরাক ও লেবানন একযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। যদিও আরব দেশগুলোর সেনাসংখ্যা বেশি ছিল, তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও নেতৃত্বের অভাব স্পষ্ট ছিল। এর বিপরীতে ইহুদিরা ছিল সংগঠিত, কৌশলী এবং সামরিকভাবে প্রস্তুত।
প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইহুদি সশস্ত্র বাহিনী একের পর এক কৌশলগত অঞ্চল দখল করে। ফিলিস্তিনিরা ভয়ে এবং সংঘাতের মুখে তাদের বসতবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়, যার ফলে প্রায় সাত লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। যুদ্ধবিরতির সুযোগে ইসরায়েল চেকোস্লোভাকিয়া থেকে আধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করে আবারও আরবদের উপর আক্রমণ চালায় এবং জয়ের পথে এগিয়ে যায়।
১৯৪৯ সালে সংঘাতের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। ইসরায়েল রাষ্ট্র টিকে যায় এবং দ্রুত সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করে। ইসরায়েলিরা মনে করে, ১৯৪৭ সালের জাতিসংঘের প্রস্তাব যদি ফিলিস্তিনিরা গ্রহণ করত, তবে দুটি রাষ্ট্র আজ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারত।
মুমু