ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

মার্কিনীদের মনোবলে ধস: ২০০৮ সালের মন্দার সংকটকেও পেছনে ফেলেছে!

প্রকাশিত: ০৮:১৬, ১২ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৮:২০, ১২ এপ্রিল ২০২৫

মার্কিনীদের মনোবলে ধস: ২০০৮ সালের  মন্দার সংকটকেও পেছনে ফেলেছে!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ক্রমাগত বাড়ছে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির ভোক্তা মনোবল ১১ শতাংশ কমে গত ৭০ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে। এই পতন ২০০৮-০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের সময়কার স্তরকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য দায়ী করছেন ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য যুদ্ধ-সংক্রান্ত নীতিকে, যার প্রভাবে সাধারণ মার্কিন নাগরিকরা আগামী ১২ মাসে ৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা করছেন।

 

 

বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব দিন দিন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। চীন সম্প্রতি মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরের কাছাকাছি। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারকে বছরে প্রায় ৩,৭০০ ডলার বাড়তি খরচের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তবে শুল্ক বৃদ্ধি সত্ত্বেও উৎপাদন খাতে প্রত্যাশিত সুফল মিলছে না। ফোর্ডের সাবেক প্রধান নির্বাহী মার্ক ফিল্ডস জানিয়েছেন, দক্ষ শ্রমিকের অভাবে কারখানাগুলো চালানোই কঠিন হয়ে পড়ছে।

অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা এখন স্পষ্ট। ব্ল্যাকরকের প্রধান নির্বাহী ল্যারি ফিঙ্ক সতর্ক করেছেন যে মার্কিন অর্থনীতি ইতিমধ্যেই মন্দার শুরুতে রয়েছে অথবা এর খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। তাঁর মতে, বাজারের অস্থিরতা এবং বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভকে শীঘ্রই নীতিহার পরিবর্তন করতে হতে পারে।

 

 

হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরেও এই ইস্যুতে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। একদিকে ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেনসন এবং কেভিন হ্যাসেট শুল্ক কমানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, অন্যদিকে পিটার নাভারো কঠোর শুল্ক নীতিতে অনড় রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৯০ দিনের 'বিরতি' ঘোষণা করলেও চীন তার পাল্টা শুল্ক কৌশল থেকে সরে আসেনি।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মার্কিন নীতির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ওবামা প্রশাসনের সাবেক বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোমান সতর্ক করেছেন, যদি ১০ শতাংশ শুল্ক স্থায়ী হয়, তাহলে তা হবে বর্তমান গড় শুল্কের চেয়ে ৫০০ শতাংশ বেশি, যা ভেনিজুয়েলা বা ইরানের শুল্ক নীতির সমতুল্য হবে।

 

 

এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞরা চীন-মার্কিন সরাসরি আলোচনার উপর জোর দিচ্ছেন। তবে কে প্রথম নমনীয় হবে তা নিয়ে এক ধরনের 'গেম অব চিকেন' চলছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, বহুপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমেই কেবল এই সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব। বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ নীতিগত অস্থিরতা মার্কিন অর্থনীতিকে গভীর এক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যার প্রভাব শুধু আমেরিকায়ই নয়, গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতেই পড়বে।

আঁখি

×