
ছবি: সংগৃহীত।
আবারও আমদানিকৃত পণ্যের উপর বড় পরিসরে শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের সাতটি দেশকে টার্গেট করে নতুন এই শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই দেশগুলোকে "সবচেয়ে খারাপ অপরাধী" বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
নতুন শুল্কের আওতায় চীনা পণ্যের উপর শুল্ক হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশে। যদিও বাংলাদেশের মতো কিছু দেশের পণ্যের উপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রেখেছেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে এবং মার্কিন নাগরিকদের চাকরির ক্ষেত্রেও সুরক্ষা দেবে।
তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মার্কিন ভোক্তাদের ব্যয়ের উপরও।
শুল্ক হলো অন্য দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর আরোপিত কর। এটি সাধারণত পণ্যের মূল দামের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ হিসেবে ধার্য করা হয়। যেমন, ২৫ শতাংশ শুল্ক মানে ১০ ডলারের পণ্যের জন্য অতিরিক্ত ২.৫ ডলার দিতে হবে। এই কর আমদানিকারক কোম্পানিকে সরকারকে পরিশোধ করতে হয়। তারা চাইলে এই খরচ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ভোক্তাদের উপর চাপিয়ে দিতে পারে।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সুরক্ষায় শুল্ক ব্যবহারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর মতে, এতে দেশীয় পণ্যের চাহিদা বাড়বে, সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে এবং দেশে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে।
ট্রাম্পের অভিযোগ, অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে প্রতারণা করেছে। তাই এই শুল্কের মাধ্যমে তিনি বাণিজ্য ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে চান।
প্রথম দফায় ট্রাম্প চীন, মেক্সিকো ও কানাডার উপর শুল্ক আরোপ করেন। তিনি দাবি করেন, অভিবাসন ও মাদক নিয়ন্ত্রণে এসব দেশের যথাযথ ভূমিকার অভাবের কারণে এমন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
এরপর তিনি ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ নামক একটি নীতির আওতায় আরও দেশকে অন্তর্ভুক্ত করেন। অর্থাৎ, যেভাবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক আরোপ করে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের পণ্যে পাল্টা শুল্ক দেবে। যদিও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে এটি বাস্তবায়িত হয়নি। যেমন, যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি পণ্য আমদানি করলেও তাদের উপরও শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
৫ এপ্রিল থেকে সব আমদানির উপর ১০% বেজলাইন শুল্ক চালু করেন ট্রাম্প। এতে যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া ও সৌদি আরবসহ অনেক দেশ অন্তর্ভুক্ত হয়।
৯ এপ্রিল থেকে সাতটি দেশের জন্য উচ্চতর শুল্ক কার্যকর হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
- কম্বোডিয়া: ৪৯%
- ভিয়েতনাম: ৪৬%
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন: ২০%
- চীন: ১২৫% (আগের ২০% থেকে এক লাফে বৃদ্ধি)
চীনের উপর প্রাথমিকভাবে ৫৪% শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, কিন্তু চীনের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার হুমকিতে ট্রাম্প সেটি বাড়িয়ে ১২৫% করেন।
মেক্সিকো ও কানাডার উপর ২৫% শুল্ক এবং ক্যানাডিয়ান জ্বালানির উপর ১০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম এবং বিদেশি গাড়ির উপরও ২৫% হারে শুল্ক কার্যকর হয়েছে। গাড়ির যন্ত্রাংশের উপরও একই হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্কের কারণে আমদানি খরচ বাড়বে এবং কোম্পানিগুলো সেই ব্যয় ভোক্তার উপর চাপিয়ে দেবে। যার ফলে পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, কফি ও অ্যালকোহলের মতো পণ্যের দাম বাড়বে। আমদানি উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি দেশীয় পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। বিশেষ করে গাড়ি, যার যন্ত্রাংশ বারবার সীমান্ত পার হয়, সেগুলোর দাম ৪০০০ থেকে ১০,০০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন বলেন, “এই শুল্কের ফলাফল হবে কোটি কোটি মানুষের জন্য ভয়াবহ।” ৯ এপ্রিল, কানাডা কিছু মার্কিন গাড়ির উপর ২৫% পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এই শুল্ককে "ভুল সিদ্ধান্ত" বলে অভিহিত করেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, “এটি বন্ধুর মতো আচরণ নয়।” দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাকসু বলেন, “এটি প্রমাণ করে, বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ এখন বাস্তব।” জাপান জানিয়েছে, তাদের উপর আরোপিত ২৪% শুল্ক "চরমভাবে দুঃখজনক" এবং এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও মার্কিন-জাপান বাণিজ্য চুক্তির পরিপন্থী।
নুসরাত