
ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক ঘোষণা বিশ্ব অর্থনীতিতে তীব্র অভিঘাত এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুই দিনের পতন ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার। মাত্র দুই দিনেই পুঁজিবাজার থেকে মুছে গেছে ৬.৬ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদমূল্য।
মঙ্গলবার সামান্য ঘুরে দাঁড়ালেও, বুধবার আবারও পতনের মুখে পড়ে বাজার, কারণ ওই দিন থেকেই ট্রাম্পের নতুন আমদানি শুল্ক কার্যকর হয়। এর মধ্যে রয়েছে চীনা পণ্যের ওপর ১০৪ শতাংশ হারে চড়া শুল্ক। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা আরও জোরদার হয়েছে।
কে কত শুল্কের মুখে পড়ছে?
হোয়াইট হাউস ৫৭টি দেশ, অঞ্চল ও বাণিজ্যিক জোটের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যাদের ওপর বাড়তি শুল্ক বসানো হচ্ছে। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য প্রায় সব বাণিজ্য অংশীদারের আমদানির ওপর ১০ শতাংশ হারে একক শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শুল্ক হলো একটি দেশের সরকার কর্তৃক আরোপিত আমদানি কর, যা পণ্য বা সেবা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করতে হয়। এর উদ্দেশ্য স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া হলেও, সাধারণত এতে বিদেশি পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
কত টাকা ক্ষতি হয়েছে বাজারে?
ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং সোমবার মিলিয়ে বিশ্ববাজার থেকে মুছে গেছে প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলার। যা বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ এবং বিশ্বের ১৫০টি দেশের সম্মিলিত উৎপাদনের চেয়েও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের সূচক S&P ৫০০ গত চার দিনে সূচনার পর সবচেয়ে বড় পতনের সাক্ষী হয়েছে। এই সূচক সাধারণত মার্কিন অর্থনীতির স্বাস্থ্য যাচাইয়ের একটি মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে সূচকটি তার সর্বশেষ সর্বোচ্চ চূড়ার চেয়ে ২০ শতাংশ নিচে অবস্থান করছে, যা 'বিয়ার মার্কেট'-এর ইঙ্গিত দেয়।
সোনা, তেল ও বিটকয়েনের অবস্থা কেমন?
শেয়ারবাজারের পাশাপাশি সোনা, অপরিশোধিত তেল ও বিটকয়েনের দামও গত সপ্তাহে কমেছে।
সোনা: অনিশ্চয়তার সময় নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হলেও, ৭ এপ্রিল দাম ২ শতাংশ পড়ে দাঁড়ায় প্রতি আউন্সে ২,৯৭৭ ডলার। এরপর মঙ্গলবার তা সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ২,৯৮৪ ডলারে।
তেল: শুল্ক ঘোষণার পর তেলের দাম ৭ শতাংশ পড়ে যায় এবং ৫ এপ্রিল আরও ২ শতাংশ কমে। মঙ্গলবার তা কিছুটা স্থির হয়ে ছিল ৬০ ডলারে, তবে বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৫৭ ডলারের নিচে—যা ২০২১ সালের পর সর্বনিম্ন।
বিটকয়েন: ট্রাম্পের অধীনে বিটকয়েনের বৃদ্ধি প্রত্যাশিত হলেও বাস্তবে এর দাম ৩০ শতাংশ কমে গেছে। ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার সময় বিটকয়েনের দাম ছিল ১,০৯,০০০ ডলার, বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৭৭,০০০ ডলারে।
বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে কী হচ্ছে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার এবং উদীয়মান বাজারগুলোর মুদ্রায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ইউরো: গত দুই দিনের পতনের পর ০.১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.০৯ ডলারে।
ব্রিটিশ পাউন্ড: এক সপ্তাহে ১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১.৩০ ডলার থেকে ১.২৮ ডলারে।
রুশ রুবল: ৮৪.২ থেকে বেড়ে ৮৬.১ রুবল হয়েছে প্রতি ডলারে।
চীনা ইয়ুয়ান: ১৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে, পিপলস ব্যাংক অফ চায়না সেট করেছে ৭.২০৩৮ ইয়ুয়ান প্রতি ডলারে।
ভারতীয় রুপি: ০.৭ শতাংশ পতনের মধ্য দিয়ে তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, বর্তমানে ৮৬.৪৪ রুপি প্রতি ডলার।
জাপানি ইয়েন: নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, ১৫০.৩৬ থেকে বেড়ে ১৪৬.৪১ ইয়েনে দাঁড়িয়েছে প্রতি ডলার।
ব্রাজিলের রিয়েল: এক সপ্তাহে ৫.৬৭ থেকে কমে ৬.০০ রিয়েল প্রতি ডলারে।
মেক্সিকান পেসো: ২০.৩৪ থেকে কমে ২০.৮৯ পেসো প্রতি ডলারে।
দক্ষিণ আফ্রিকান র্যান্ড: এক সপ্তাহে ৪.৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯.৭৫ র্যান্ডে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
মন্দার আশঙ্কা কতটা বাস্তব?
প্রযুক্তিগতভাবে মন্দা বোঝায় টানা দুই প্রান্তিকে জিডিপির নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১টি মন্দার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: তেলের সংকট (১৯৭৩-৭৫), ডটকম ফাটল (২০০১), বৈশ্বিক আর্থিক সংকট (২০০৭-০৯), এবং কোভিড-১৯ (২০২০)।
জেপি মরগ্যান মনে করছে, মন্দার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ। গোল্ডম্যান স্যাকস ও মর্নিংস্টার তাদের পূর্বাভাসে বলছে সম্ভাবনা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে।
শহীদ